সিকদার গ্রুপের ‘আর এন্ড আর হোল্ডিংস’ এই হোটেল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
তবে সিকদার গ্রুপের দাবি, এক হাজার একর নয়, হোটেলের জন্য তারা ৩০ একর জমি ইজারা নিয়েছে।
এই স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৭ প্রায় কিলোমটিার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে কাপ্রুপাড়ায় রোববার সাংস্কৃতিক প্রদশর্নী কর্মসূচির আয়োজন করেছে ম্রোরা।
চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত প্রায় ২৫টি পাড়ার বাসিন্দা সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন। পরে ম্রো জনগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক শিশু ও নারী-পুরুষ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।
এই সময় তারা ঐতিহ্যবাহী ম্রো বাঁশি ‘প্লুং’ বাজিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন।
“যার ফলে চারটি গ্রাম পরোক্ষ এবং ৭০ থেকে ১১৬টি পাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাড়াগুলোর মধ্যে ১০ হাজারের মতো জুমচাষি উদ্বাস্তু হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।”
‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তাদের ভূমি নেওয়া হচ্ছে না’ উল্লেখ করে প্রচারপত্রে অভিযোগ করা হয়, “বিলাসী জীবনের ব্যবসার জন্য বেদখল করা হচ্ছে। সিকাদর গ্রুপ (আর এন্ড আর হোল্ডিংস) একটি বিতর্কিত কর্পোরেট কোম্পানি। এই কোম্পানির শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে।”
পাঁচ দিনের মধ্যে নাইতং পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেলসহ পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ স্থগিত না হলে চিম্বুক পাহাড়বাসী আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানানো হয় এই প্রচারপত্রে।
“পর্যটন স্থাপনা হয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা আর স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না। নিজের মাটিতে আমরা পরাধীন হয়ে যাব।”
কাপ্রুপাড়াবাসী নারী তুমসোয়া ম্রো বলেন, “চিম্বুক পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থ্যা ভালো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের এখন নিরাপত্তা দরকার। পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ হলে আমরা আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগব।”
এম্পুপাড়া কারবারী মেনয়ং ম্রো বলেন, চিম্বুক পাহাড় এবং কয়েকটি উপজেলা ছাড়া আর কোথাও ম্রো জনগোষ্ঠী নেই। বিশাল এলাকা নিয়ে পর্যটন স্থাপনা করলে ম্রোদের অস্তিত্ব আরও হুমকির মুখে পড়বে।
“চিম্বুক পাহাড়ে আদিকাল থেকে জুমচাষ করে বসবাস করে আসছি। এখন নিজেদের ভূমি রক্ষা করার জন্য আমাদের এক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
রামরি পাড়া থেকে আসা মেনঙি ম্রো বলেন, “২০০৬ সালে পার্শ্ববর্তী টংকাবতি এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলাম। চিম্বুক পাহাড়ে এসে যদি আবারও উচ্ছেদ হতে হয় আমরা কোথায় যাব?”
চিম্বুক পাহাড়ে এর আগেও পর্যটন স্থাপনার নামে শত শত জুমচাষের জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ম্রো ভাষার লেখক ইয়াঙান।
প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, “ম্রোরা পর্যটন উন্নয়নে বিরোধিতা করছেন না; কিন্তু পর্যটন স্থাপনার নামে ম্রোদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।”
এই বিষয়ে সিকদার গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর ফরিদ উদ্দিন আহমদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে প্রথমে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট ৪০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিল। পরে তাদের কাছ থেকে সিকদার গ্রুপ লিজ নেয়।
“কাগজে প্রথমে ২০ একরের কথা লেখা ছিল। পরবর্তীতে কয়েক বছরের মধ্যে পাহাড় ভেঙে যায়। এরপর আরও ১০ একর নেওয়া হয়। পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য মোট ৩০ একরের বাইরে আর কোনো জমি নেই।”
পর্যটন স্থাপনার নামে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদ আশঙ্কার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফরিদ বলেন, “স্থানীয় কিছু দুষ্ট ব্যক্তি এ ধরনের কথা ছড়াচ্ছে। হোটেল নির্মাণ হলে স্থানীয়দের জীবনমান এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
এই বিষয়ে সবাইকে বিস্তারিত জানানো হবে জানিয়েছেন বান্দরবান সেনা রিজিয়নের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো. শাহিনুর এমরান।
তবে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বান্দরবান জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম।
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমাকে রোবাবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগেও গত ৮ অক্টেবার পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং উচ্ছেদের আশঙ্কা জানিয়ে চিম্বুক পাহাড়ে আটটি পাড়ার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল।