এই উপলক্ষে শুক্রবার শোক শোভাযাত্রা, নিহতদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ, গাইবান্ধা সম্মিলিতভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লি জয়পুর গ্রামে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
পরে সাঁওতাল পল্লি জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম থেকে ব্যানার ও বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুনসহ লোকজন মিছিল নিয়ে সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ শহীদ মিনারের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। সেখানে বেলা ১১টায় সমাবেশের শুরুতে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১মিনিট নীরবতা পালন করে।
আরও বক্তব্য দেন ভূমি অধিকার কর্মী এএলআরডির প্রতিনিধি রফিক আহমেদ সিরাজী, আদিবাসী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, সিপিবি নওগা জেলা সভাপতি মহসিন রেজা, আদিবাসী ইউনিয়নের উপদেষ্টা বদিউজ্জামান, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল গণি রিজন, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, আদিবাসী নেতা সুনীল খালকো, সুফল হেমব্রম, প্রিসিলা মুর্মু, অলিভিয়া হেমব্রম প্রমুখ।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী এবং সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে উচ্ছেদের নামে আদিবাসীদের বসতবাড়িতে হামলা করে। তারা নিরীহ আদিবাসীদের বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গুলিবর্ষণ করে।
গুলি ও নির্যাতনে শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নিহত এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন।
সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, বিকল্প জায়গা থাকা সত্বেও কতিপয় স্বার্থন্বেষী এখন আদিবাসীদের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প করার পাঁয়তারা করছে।
তিনি এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাঁওতাল-বাঙালিসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
ওই ঘটনায় করা মামলার বাদী সাঁওতাল নেতা থোমাস হেমব্রম বলেন, ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই গাইবান্ধা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার অভিযোগপত্র দেন আদালতে। কিন্তু অভিযোগপত্রে মূল ১১ আসামির নাম বাদ দেন তিনি।
“এই কারণে ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করেন বাদী। গত ২৩ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্র শুনানি শেষে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।”
সিআইডির গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর হাসান বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের কাছে পিবিআই হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে তা তদন্তাধীন আছে।
এই ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।