দোহারের পশু হাসপাতালের চিত্র পাল্টে গেছে

পেশাগত দায়িত্বের বাইরে প্রাণীর সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করায় এক পশুচিকিৎসকের হাত ধরে ঢাকার দোহার উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিত্র পাল্টে গেছে বলছেন খামারিরা।

আসাদুজ্জামান সুমন কেরানীগঞ্জ-দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2020, 04:54 AM
Updated : 2 Nov 2020, 04:54 AM

তিন বছর আগে এ হাসপাতালে দিনে গড়ে মাত্র পাঁচজন খামারি পশুর জন্য সেবা নিতে আসতেন আর বর্তমানে দৈনিক গড়ে একশ’র বেশি খামারি আসেন।

তা জানা গেল সেই পশুচিকিৎসতের দোহার প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শামীম হোসেনের কাছেই।

ডা. শামীম বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এ হাসপাতালে যোগ দিই আমি। সে সময়ে দোহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে মাত্র পাঁচজন খামারি সেবা নিতে আসতেন। বর্তমানে গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ জন খামারি সেবা নিতে আসছেন।

“এতে আগের তুলনায় খামারিদের হাসপাতালমুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অন্তত ২৫ গুণ।”

এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে এক হাজার ৮৪০টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১২টি গরু নিয়ে দুগ্ধ খামার রয়েছে ৬১টি, ৫ থেকে ১০টি গরু নিয়ে দুগ্ধ খামার রয়েছে ১৬২টি, ২ থেকে ৫ গরু নিয়ে ছোট খামার রয়েছে এক হাজার ৪৫০টি, ছাগলের খামার ৫৪টি এবং পোল্ট্রি খামার রয়েছে ১১৩টি।

এসব খামারিদের জন্য বাৎসরিক যে ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় ‘খুবই সামান্য।’ যা তিনমাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

“সুতরাং ওষুধের বাৎসরিক বরাদ্দ যদি আরও বাড়ানো যেত তাহলে খামারিরা আরও বেশি উপকৃত হতেন।”

ইতোমধ্যে বাৎসরিক ওষুধ বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তিনি।

তবে এ কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য কোনো সহকারী নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাকে সহযোগিতা করার জন্য এ পশু হাসপাতালে দুইজন সহকারীর প্রয়োজন। একজনও নেই।”

এছাড়াও ১১ জনের জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে আট জন বলেন তিনি।

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দোহার প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে দেখা যায়, ছুটির দিনেও কয়েকজন খামারি পশু নিয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে এসেছেন।

ছুটির দিনে তারা কীভাবে সেবা পাবেন জানতে চাইলে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল নিয়ে আসা ঝর্ণা আক্তার ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বীর্য দেওয়ার জন্য গরু নিয়ে আসা খামারি রেহাজ উদ্দিন, কমল ও সজীবসহ কয়েকজন খামারি জানান, তারা ডা. শামীমকে ফোন করে এসেছেন।

ডা. শামীম বলেন, পশু হাসপাতালগুলোতে এখনও ইমার্জেন্সি সেবা চালু হয়নি। তাই সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়িতে বা কোথাও না গেলে খামারিদের সেবা দিয়ে থাকি।

পশু হাসপাতালের সেবাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে এ চিকিৎসক জানান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোসাম্মৎ শামীম নাহার সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন উপজেলার বড় বড় খামারগুলোতে যান।

আর ইমার্জেন্সি কলে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন খামারে তাকে যেতে হয় বলেন তিনি।

এ পশু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাসহ পশুদের কৃমি ও ভিটামিনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র কৃত্রিম প্রজনন এবং টিকার জন্য খামারিদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি নেওয়া হয়।

ড. শামীম জানান, দোহার পশু হাসপাতালের বাইরে সীমিত জায়গা থাকায় সেবা নিতে আসা খামারিরা প্রতিনিয়ত রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট পান। এজন্য তাদের অফিসের সামনের রাস্তার পরে এক পরিত্যক্ত ডোবা ভরাট করে সেবা গ্রহিতারদের জন্য ছাউনি ও বিশ্রামাগার করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

“ইতোমধ্যে সামান্য কিছু অনুদান পেয়েছি। যা দিয়ে ইতোমধ্যে আংশিক ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে।”

বাকি কাজ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতা চান তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কথা উল্লেখ করে ওই পশু চিকিৎসক বলেন, সরকারিভাবে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল সরকারিভাবে অফিস বন্ধ থাকলেও আমি নিজ দায়িত্ববোধ থেকে ইমার্জেন্সি সেবা অব্যাহত রেখেছিলাম। আর ২৫ এপ্রিলের পর থেকে সব ধরণের সেবা চালু রয়েছে।

তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দুগ্ধ খামারিদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিয়ে তাদের উন্নয়নের জন্য এলডিডিপি প্রজেক্টের মাধ্যমে খামারিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া চলছে।

দোহারের রেহাজ উদ্দিন, আব্দুস সালাম ও রুবেল এবং নবাবগঞ্জ উপজেলার বন্ধু খামারের সজীব আহমেদ শোভন ও কমল সাহাসহ আরও কয়েকজন খামারি ডা. শামীমের সেবা দারুণ খুশি।

তার কারণে উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমাদের মন জয় করে নিয়েছেন।’

তাকে আরো অনেক বছর পাশে চান এলাকার খামারিরা।