লালমনিরহাটে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যায় গ্রেপ্তার ৫

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে; পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে পাঁচজনকে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2020, 04:22 PM
Updated : 31 Oct 2020, 04:50 PM

জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, পুলিশ, নিহতের পরিবার ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে।

“পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার বিকালে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।

নিহত আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রি পাড়ার আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে।

একই ঘটনায় আহত সুলতান জুবায়ের আব্বাসকে (৫১) পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আব্বাস রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ার শেখ আব্বাস আলীর ছেলে।

নিহত আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী

জুয়েলের শ্যালক মিলন হক তালুকদার জানান, জুয়েল রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের গ্রন্থাগার বিভাগে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে এক স্বজন জানিয়েছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী বলেন, ‘কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে’ আসরের নামজ শেষে মসজিদের সামনে এক ব্যক্তিকে উত্তেজিত জনতা মারধর শুরু করে। সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।

ওই ঘটনায় শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে থাকা মুসল্লিরা জুয়েলের উপর উপর চড়াও হয়। খবরটি বাইরে ছড়িয়ে পড়লে বুড়িমারী বাজারের লোকজন মসজিদের দিকে ছুটতে থাকে। এই সময় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাফিজুল ইসলাম ওই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান। এরপর ইউনিয়ন পরিষদে শত শত লোক উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পাটগ্রাম থানার ওসি ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, তারা ‘বিক্ষুব্ধদের’ শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। উন্মত্ত জনতা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের দেয়াল, গ্রিল ও দরজা ভেঙে জুয়েলকে পেটাতে পেটাতে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে রশিতে বেঁধে টেনে নিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

এই অবস্থায় আহত সুলতান জোবায়ের আব্বাসকে নিয়ে পাটগ্রাম থানার ওসি ইউনিয়ন পরিষদের ছাদ বেয়ে পালিয়ে আসেন বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।

এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে সেখানে অগ্নিসংযোগ করে। তারা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, উত্তেজিত মানুষের হাত থেকে রক্ষা করতে ওই দুই ব্যক্তিকে ইউনিয়ন পরিষদে এনে তালা বন্ধ করে রেখে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, পুলিশ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে খবর দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, “এমন ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত ও ব্যথিত। পরিষদের দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে দুস্কৃতিকারীরা একজনকে বের করে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তারা ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” 

নিহত আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী জুয়েলের শ্যালক মিলন হক তালুকদার শুক্রবার পাটগ্রাম থানা কম্পাউন্ডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার দুলাভাইকে একজন ‘সৎ এবং ধার্মিক’ লোক ছিলেন। সুষ্ঠু তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।  

আর জুয়েলের এক বন্ধু সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জুয়েল দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কাছে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উত্তেজিত লোকজন হয়ত ঘটনা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করলে লোকজন জড়ো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলেও ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।”