এবার গাইবান্ধায় কয়েক দফা বন্যার ধকল গেলেও জয়পুরহাট ছিল বরাবরের মতোই নিরাপদ। ধানক্ষেতে রোগ-বালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও তেমন না থাকায় ব্যাপক ফসল ঘরে তোলার জন্য দিন গুণছিলেন কৃষকরা।
এ জেলার কোনো ক্ষেতে ধান গাছের পেটে রয়েছে থোড়, কোনোটায় দেখা দিয়েছে দুধের মতো কচি-নরম ধান, আবার কোনো ক্ষেতের ধান কাঁচা-পাকা হয়েছে। আর এসব ধান গাছের গোড়া, পেট ও আগা কেটে মিষ্টি থোড় আর ধান খাওয়ার জন্য প্রতি রাতে হানা দিচ্ছে ইঁদুরের দল। কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না কৃষকরা।
স্থানীয়ভাবে গেছো বা মেটে নামে পরিচিতি এসব ইঁদুরের আক্রমণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষকরা আমন মৌসুমে ফসলহানির শঙ্কা করছেন।
এ উপজেলার পুরানাপৈল রেল গেট এলাকার বৃদ্ধ বর্গাচাষি মজিবর রহমান বলেন,“এই যে ইঁন্দুরেরা ধান কাটে কুটে লিয়ে যাছে, অনেক কিছু করোছি বাপু কিন্তু ইন্দুরের সাথে পারে উঠি না। কি খায়্যা বাঁচমো, সব ধান ইন্দুরে খাইলে হামরা কি খামো?’
তারা জানান, এসব ইঁদুর রাতে ধান ক্ষেতে ঢুকে ধান গাছের গোড়া কেটে দেয়। ধান গাছের পেট থেকে মিষ্টি থোড় ধান খায়, আবার যেসব ক্ষেতে কাঁচা বা পাকা ধান রয়েছে সেগুলোও খায়। ইঁদুর যা খায় তার চেয়েও বেশি নষ্ট করে।
শত চেষ্টা করেও নিধন তো দূরের কথা ইঁদুরের আক্রমণই সামালে পারছেন না কৃষকরা।
সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের মোকলেছার রহমান, হানাইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, করই গ্রামের আতাউর রহমানসহ অনেকে জানান, এ জাতের ইঁদুর আকৃতিতে বাড়ি-ঘরের ইঁদুরের চেয়ে একটু বড়।
ক্ষেতে কীটনাশক বা ইঁদুর মারা বিষ ব্যবহারসহ শত চেষ্টা করেও কোনো সুফল না পেয়ে জেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
তবে কী পরিমাণ জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করতে না পারলেও বাস্তবতা স্বীকার করে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, ইঁদুর অতি চালাক প্রাণী বলে এর নিধন করা এখনও সম্ভব হয়নি।
চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের মধ্যে ৪৫ শতাংশ ধানক্ষেতে কাঁচা ধান দেখা যাচ্ছে, এ অবস্থায় ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইঁদুর যা খায় তার চেয়ে শত করা ৯০ ভাগই নষ্ট করে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসেবে চলতি রোপা আমন মৌসুমে এ জেলায় প্রায় সাড়ে ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হচ্ছে।