জামালপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

জামালপুরের এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এক নারী উদ্যোক্তা।

জামালপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2020, 11:17 AM
Updated : 30 Oct 2020, 11:17 AM

শুক্রবার জামালপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সদরের নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকারের এই অভিযোগ করেন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা ফোরাম জেলা শাখা সভাপতি নাজমা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে নাজমা অভিযোগ করেন, নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি ২০১০ সাল থেকে কাজ করছেন। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বিতরণে চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় চলতি বছরের ১ জুলাই তাকে পরিষদ থেকে লাঞ্ছিত করে বের করে তার কক্ষে তালা দেন। এরপর থেকে তিনি নিজ বাড়িতে বসে কাজ করে আসছেন।

ঘটনাটি তিনি জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে জানালে চেয়ারম্যান তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।

নাজমা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথাপিছু ২ হাজার ৫০০ করে টাকা প্রণোদনা প্রদান করেন। ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকার নাজমার কাছে কিছু ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দেওয়ার প্রস্তাব দেন যাতে নম্বরগুলোতে পাঠানো টাকা পরে চেয়ারম্যান উত্তোলন করবেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও শিশু ভাতার কার্ড বিতরণে চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে লাঞ্ছিত করে বের করে দেন।

বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নাম করে নরুন্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার কতিপয় লোকজন দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও নাজমা অভিযোগ করেন।

একই সংবাদ সম্মেলনে নরুন্দির মোয়াল্লেম আব্দুল হক হত্যা মামলার বাদী মরিয়ম আক্তার অভিযোগ করেন, তার স্বামীর হত্যা মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকারের বিরুদ্ধে সিআইডি অভিযোগপত্র দিয়েছে। জামিনে থাকা এই চেয়ারম্যান মামলা প্রত্যাহারের জন্য তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

মরিয়ম আক্তার জানান, তার স্বামী মোয়াল্লেম আব্দুল হক ২০১৭ সালের ১২ মে ১০ লাখ টাকা ডলার করতে চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকারের বাড়ি যান। এর চার দিন পর (১৬ মে) নরুন্দির ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মোয়াল্লেম আব্দুল হকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

“মৃত আব্দুল হকের পাঞ্জাবির পকেটে থাকা ম্যানিব্যাগে শাহজাহান আলী সরকারের স্বাক্ষরিত ১০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক পাওয়া যায়। চেয়ারম্যান শাহজাহানের কাছে ৩০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলেও আব্দুল হকের ডায়েরিতে উল্লেখ আছে।”

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নাজমা খাতুনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ করার পর উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এছাড়া উদ্যোক্তা নাজমার বিরুদ্ধেও ভূয়া জন্ম সনদ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।”

ইউএনও আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চাইলে উদ্যোক্তা পরিবর্তন করতে পারে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকার বলেন,  উদ্যোক্তা নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তাকে এডিসি ও সদর ইএনও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে।

“ইউনিয়ন পরিষদ রেজুলেশন করে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নাজমা বেগম অনিয়ম দুর্নীতির যেসব অভিযোগ করেছে তার কোনো ভিত্তি নাই।”

মোয়াল্লেম আব্দুল হক হত্যা মামলার বাদী মরিয়ম আক্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহজাহান আলী বলেন, আব্দুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়মকে তিনি চেনেন না। তার সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। মরিয়ম আক্তারের অভিযোগ সঠিক নয়।