ঠাকুরগাঁওয়ে রেজাউল হত্যায় ৩ বন্ধুর ফাঁসির রায়

ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচ বছর আগে রেজাউল ইসলাম হত্যা মামলায় তিন বন্ধুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 03:11 PM
Updated : 29 Oct 2020, 03:11 PM

বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিএম তারিকুল কবীর এই রায় ঘোষণা করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ।

রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল হামিদ জানান, দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ৩৭৯ ধারায় তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। ৩০২ ধারায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড, ২০১ ধারায় প্রত্যেককে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, যা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড এবং ৩৭৯ ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড তিন হাজার টাকা জরিমানা, যা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডিতরা হলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার বারিল্যা উত্তরপাড়া গ্রামের প্রয়াত আকবর আলীর ছেলে সুইট আলম (২৯), দিনাজপুরের চিবিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ পলাশবাড়ি গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ (২৯) ও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর সরকারপাড়া গ্রামের বজির উদ্দীনের ছেলে হাসান জামিল (৩২)।

এদের মধ্যে হাসান জামিল পলাতক রয়েছেন।

মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম (১৮) স্থানীয় টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে লেখাপড়ার পাশাপশি ওয়ার্ল্ড ভিশন-২১ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে দণ্ডিত তিনজনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

“রেজাউলের একটি বাজাজ মোটরসাইকেল ছিল, যা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এই তিন বন্ধু তাকে হত্যা করে বলে মামলায় অভিযোগ।”

আইনজীবী হামিদ বলেন, ২০১৫ সালের ৪ মার্চ সন্ধ্যায় দণ্ডিতরা রেজাউল ইসলামকে তার মোটরসাইকেলসহ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর ভানোর সরকারপাড়া গ্রামে নিয়ে আসেন।

“ওই রাতে গ্রামের পার্শ্ববর্তী কৈমারী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে রেজাউলকে নিয়ে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘাড় মটকে দেন এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।”

হামিদ আরও বলেন, পরে রেজাউলের মরদেহ ও তার পরনের কাপড় বাঁশঝাড়ের শুকনো ডালপাতা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে বিকৃত করেন। হত্যার পর দণ্ডিতরা তার মোটরসাইকেলটি হাসান জামিলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে কর্মস্থলে ফিরে যান।

আইনজীবী আব্দুল হামিদ জানান, ঘটনার দুই দিন পর (৬ মার্চ) ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ বাঁশঝাড় থেকে রেজাউলের লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাতনামা হিসেবে এবং বালিয়াডাঙ্গী থানার তৎকালীন এসআই আবু তালেব সরকার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, মোটরসাইকেলসহ রেজাউল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বড়ো ভাই শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে দিনাজপুর র‌্যাব-১৩ এর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়।

হামিদ আরও বলেন, অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১৩ কাজ শুরু করে। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পেছনে জড়ির সন্দেহে মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশকে আটক করে র‌্যাব। এরপর তার স্বীকারক্তির ভিত্তিতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে সুইট আলম ও হাসান জামিলকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয় এবং মামলায় সুইট আলম, মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ ও হাসান জামিলকে আসামি করা হয় বলে হামিদ জানান।

বালিয়াডাঙ্গী থানার তৎকালীন এসআই একেএম জগলুল মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার তিনজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।