চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর গত বিশ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ মাইন উদ্দীন আহমেদ (৮০)।
কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাদের ‘ভুলে’ হয়েছে মেনে কয়েকটি চিঠি চালাচালি করলেও পরবর্তীতে তারাই অফিস আদেশে তাকে পেনসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে।
ভুক্তভোগী মাইন উদ্দীন আহমেদ ১৯৬৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠাকুরগাঁও পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলে সহকারী পাম্প চালক (অনিয়মিত) হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০০ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।
মাইন উদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৯৮০ সালে ওই সার্কেল থেকে অনিয়মিত পাম্প চালক ও সহকারী পাম্প চালকদের চাকরি নিয়মিত করা হলেও ‘ভুলবশতঃ’ তার নাম বাদ পড়ে। এ নিয়ে তিনি পাউবোর কর্মচারী পরিদপ্তরের উপপরিচালকের কাছে আবেদন করলে সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে সাত দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল চিঠি দেওয়া হয়।
মাইন উদ্দীন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওই বছরের ২৭ জুলাই চিঠির জবাবে ১৯৮০ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কর্তৃক অনিয়মিত কর্মচারীদের আত্মীকরণের জন্য দেওয়া তালিকায় ‘ভুলক্রমে’ তার নাম বাদ পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে তাকে ১৯৬৯ সালের ১ মার্চ থেকে নিয়মিত করার সুপারিশ করেন। এই চিঠির আলোকে কর্মচারী পরিদপ্তরের পরিচালক ২০০০ সালের ২৬ জুলাই এক আদেশে তাকে ১৯৬৯ সালের ১ মার্চ থেকে নিয়মিত করতে অফিস আদেশ দেয়।
২০০০ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।
মাইন উদ্দীন বলেন, পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি প্রদানে আপত্তি জানিয়ে ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পে আবেদন করলে পাউবোর হিসাবরক্ষণ পরিদপ্তর থেকে জানানো হয় ‘গ্র্যাচুইটির পরিবর্তে তাকে পেনশন প্রদানের সুযোগ নাই’।
মাইন উদ্দীন জানান, সর্বশেষ তিনি ২০১৯ সালের ৪ জুলাই তারিখে পঞ্চগড়ে অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে আবেদন করলে দুদক কমিশনার পাউবোর পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ ব্যাপারে পদক্ষেণ গ্রহণ ও কমিশনকে অবহিত করতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৯ সালের ১৯ অগাস্ট মাইন উদ্দীন পেনশন পাওয়ার যোগ্য কিনা তা জানতে আবার পাউবোর কর্মচারী পরিদপ্তরের পরিচালককে চিঠি দেন।
সেই চিঠির উত্তর এখনও আসেনি বলে জানান মাইন উদ্দীন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পঞ্চগড় শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় পাউবোর পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ সরকারি ছোট ছোট তিন কক্ষের একটি বাসভবনে বসবাস করছেন মাইন উদ্দীন। বর্তমানে তিনি, তার এক ছেলে সস্ত্রীক সেখানেই বসবাস করছেন।
তিনি জানান, চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পর থেকে তিনি এখানে বসবাস শুরু করেন। অর্থাভাবে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে থাকা সামান্য কিছু জমি বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় অবশিষ্ট আর কিছু নেই।
মাইন উদ্দীন আহমেদ বলেন, “একজন কর্মকর্তার ভুলের খেসারত হিসেবে আমাকে পেনশন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই ভুলের দায় তো আমার না। ৩৩ বছর চাকরি করে আমি ২০ বছর আগে অবসরে গেলেও এখনও পেনশন সুবিধা না পেয়ে মানবেতভাবে দিন কাটাচ্ছি।”
পেনশনের টাকা পেলে এক টুকরা জমি কিনে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান মাইন উদ্দীন।
এই ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্র্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এই ব্যাপারে পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, “পঞ্চগড়ে কিছুদিন আগে যোগদান করায় বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”