জলাবদ্ধ সড়কে বাতিহীন পৌরে নাকাল ডামুড্যাবাসী

বর্জ্য শোধনাগার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াই বেহাল সড়কে জলাবদ্ধতা নিয়ে কাটছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরবাসীর দিনরাত্রি।

শরীয়তপুর প্রতিনিধিকেএম রায়হান কবীর,বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2020, 07:29 AM
Updated : 27 Oct 2020, 01:32 PM

নামে মাত্র প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাওয়া এ পৌরসভার বাসিন্দাদের বছর বছর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়লেও নাগরিক সুবিধা না থাকার বঞ্চনায় ফুঁসছে সাধারণ নাগরিক থেকে পৌর কর্তারাও।

সাত বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি জায়গা নিয়ে ১৯৯৭ সালের ৯ জুন গঠিত ডামুড্য পৌরসভাকে ২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দফায় দফায় বেড়েছে পৌরকর।

অথচ প্রায় ২০ হাজার পৌর-নাগরিকের ড্রেনেজ ব্যবস্থা পাঁচ কিলোমিটার বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে  বর্তমানে এক কিলোমিটারও ড্রানেজ নেই। তাও আবার বন্ধ হয়ে রয়েছে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জেলা সদর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরের এ পৌরসভায় কোনো বর্জ্য শোধনাগার বা ডাম্পিং ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়নি।

এতে ২৭ কিলোমিটার অপ্রশস্ত বেহাল পাকা রাস্তা রয়েছে। যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর সংস্কার না করায় বেশিরভাগ সড়কই ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এ এলাকায় ১০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

উপজেলা পরিষদ এলাকা এ পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ি-অফিসে পানি ওঠে বলে জানালেন ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুরতজা আল মুঈদ।

এছাড়াও পৌর এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে মোল্লা বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, কুলকুড়ি স্কুল থেকে পশ্চিম কুলকুড়ি ভুইয়া বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, তুলাতলা থেকে হাবিব মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, আলমগীর চৌকিদারের বাড়ি থেকে নতুন মাছ বাজার পর্যন্ত রাস্তাসহ অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশা।

পৌরসভা এলাকায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্পে পাওয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটা সোলার লাইট থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। সন্ধ্যা নামলেই গুরত্বপূর্ণ এলাকাতেও অন্ধকারে ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুরতজা আল মুঈদ বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে জলাবদ্ধতা থাকায় পৌরবাসী উপজেলা গেইট দিয়ে মাসের পর মাস যাতায়াত করতে পারছেন না। এ সড়ক বছরের প্রায় সময়ই তলিয়ে থাকে।

“এ সমস্যার কারণে উপজেলা পরিষদে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিতে অনিহা দেখায় সবাই। আমার কাছে জনপ্রতিনিধিরাও এসে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।”

ডামুড্যা পৌর সভায় এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলেও জানান তিনি।

ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভার রাস্তা ঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ যে সব নাগরিক সুবিধা দেওয়ার কথা সেগুলো আমরা পাচ্ছি না।

ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর অভিযোগ করে বলেন, আমরা যথাযথ ট্যাক্স দিয়েও সেবা পাই না।

ডামুড্যা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রুবেল মাদবর বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই উপজেলা হাসপাতাল ও কলেজ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এটাই পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি।

স্থানীয় নেতারা বলছেন, তিনটি পাম্পের একটি প্রায়ই নষ্ট থাকায় অধিকাংশ পরিবার বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না।

এলাকাবাসীর আক্ষেপ ২৩ বছর ধরে দফায় দফায় পৌরকর বাড়লেও বাড়েনি কোনো নাগরিক সুবিধা। তবে নির্বাচন এলেই উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ায় প্রার্থীরা।

এসব অভিযোগ মেনে নিয়ে পৌর মেয়র হুমায়ুন কবির বাচ্চু সৈয়াল বলছেন, বরাদ্দের অভাবে কাজ করতে পারছেন না।

“অর্থ বরাদ্দের অভাবে প্রধান প্রধান সড়কসহ অনেক উন্নয়ন করতে পারিনি।”

ডামুড্যাসহ চারটি পৌরসভার উন্নয়নের জন্য চারশ’ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া রয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, সেটি অনুমোদন হলে আগামী এক বছরের মধ্যে রাস্তা, ঘাট ও ড্রেনসহ সব উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব হবে।