রেকর্ড পরিমাণ আলু উপাদনের জন্য জয়পুরহাট জেলার নাম আছে। আগের বছরগুলোতে আলুর বাজারে ধস নামায় এ জেলার কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছিলেন। এবার চিত্র উল্টো।
অন্য শাক-সবজির পাশাপাশি আলুরও দাম বৃদ্ধিতে অল্প আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। জেলা জুড়ে আলুর বাজারে তাই বিরাজ করছে এক রকম অস্থিরতা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং জেলা মার্কেটিং বিভাগের দেওয়া তথ্যে জয়পুরহাটে গেল মৌসুমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল।
মৌসুমের শুরুতে এক লাখ ঊনপঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ১৮টি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
এরমধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবং বিদেশে রপ্তানি করে ফুরিয়ে যায় প্রায় ৮ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আলু।
হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত এই ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আলুর মধ্যে আবার বীজ আলু রয়েছে ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
ফলে এই অল্প পরিমাণ আলুর জন্য বাজার দরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
হিমগারে পাইকারী আলুর মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা বেধে দিয়ে নোটিশ ঝোলানো হলেও গোপনে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এবং খুচরা মূল্য আলুর জাত ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সরেজমিনে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দর বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ ভোক্তারা।
জয়পুরহাট শহরের সাহেব বাজারে শান্তিনগরের আসলাম হোসেন, পাঁচবিবি পৌর শহরের কাঁচা বাজারে চানপাড়া গ্রামের শাহারুল, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর বাজারে জাফরপুর গ্রামের মোফাজ্জলসহ জেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজার করতে অনেক ক্রেতারা অভিযোগে জানান, আগের বছরগুলোতে এ সময় সর্বোচ্চ ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতেন তারা। সেখানে এবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হচ্ছে তাদের।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন জয়পরহাট শহরের নতুনহাটে আব্দুস সাত্তার, কালাই উপজেলার পুনট বাজারে সাহেব আলী, মজিবর রহমান, ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারে মিজানুর রহমানসহ অনেক আলু ব্যবসায়ী।
এসবের পরও সরকারি নিদের্শনায় হিমাগারগুলোতে পাইকারি মূল্য কেজি প্রতি ২৭ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে বলছেন সংরক্ষণকারী, ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষরা।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগারের প্রধান হিসাব রক্ষক রায়হান আলম, সালামিন হিমাগারের ব্যবস্থাপক রতন কুমার, পাঁচবিবি উপজেলার কুশুম্বা হিমাগারের ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান জিয়াসহ বিভিন্ন হিমাগারের কর্মকর্তারা জানান, আলু বিক্রি করেন সংরক্ষণকারী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তারপরও সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক আলু বিক্রির জন্য হিমাগারের বিভিন্ন স্থানে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া ছাড়াও হিমাগারগুলো এলাকায় আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেফতাহুল বারী ও জেলা মার্কেটিং অফিসার রতন কুমার বাস্তবতা স্বীকার করে জানান, হিমাগারগুলোতে আলু কেনা ও সংরক্ষণসহ কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৪ টাকা, সেখানে সরকারি নির্দেশনায় আলু বিক্রি করা হলে সংরক্ষণকারীদের কোনো লোকসান হবে না।
“তারপরও এ সহজ হিসেব যেন কোনো কাজেই আসছে না, আলু নিয়ে সবখানে চলছে হাহাকার।”
বাজার ব্যবস্থাপনায় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় করা হলে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন বলে এলাকার অনেকে মনে করেন।