পুকুরে মাছের সাথে মুক্তা চাষে মাগুরায় সাফল্য

মাগুরায় পুকুরে মাছের সাথে মুক্তা চাষের উদ্যোগ সাফল্য পেতে যাচ্ছে।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2020, 10:24 AM
Updated : 23 Oct 2020, 11:01 AM

মাগুরার এই সফল মুক্তা চাষি আবুল হোসেন খান তার পুকুরের ২৫ হাজার ঝিনুক থেকে অন্তত ৮০ হাজার মুক্তা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

সরকারিভাবে সারা দেশে এ চাষ ছড়িয়ে দিলে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি গ্রামবাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলে করেন তিনি।

তার সাথে সহমত পোষণ করে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারাও বলছেন, এ চাষ সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারলে স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য হবে এক বড় ধরনের সুখবর।

ইউটিউবে মুক্তা চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠা আবুল হোসেন বলেন, সদরের রামনগর কেষ্টপুর গ্রামে তার ছয়টি পুকুরে তিন একর জলাশয়ে মাছের সাথে মুক্তা চাষের উদ্যোগ নেন।

তাকে বাংলাদেশ ও ভারতের মুক্তা চাষে অভিজ্ঞ দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ফোনে নিয়মিত পরামর্শও নেন।

তিনি জানান, প্রথমে তার পুকুর থেকে ২৫ হাজার ঝিনুক সংগ্রহ করেন।

দেশের মধ্যে কুয়াকাটা ও ভারত থেকে মুক্তা তৈরির ছাঁচ সংগ্রহ করে তা সেসব ঝিনুকের মধ্যে প্রবেশ করান।

ছাঁচ ভর্তি ঝিনুকগুলো নেটের এক-একটি ব্যাগে ১২ থেকে ১৫টি ঝিনুক ভরে প্লাস্টিকের বোতলের সাথে বেঁধে পুকুরে ছাড়েন।

বর্তমানে ৬টি পুকুরে মুক্তা চাষের জন্য ছাড়া ২৫ হাজার ঝিনুকের বয়স কোনোটির তিন মাস আবার কোনটির ছয় মাস হয়েছে।

পুকুরে স্বাদু পানিতে পূর্ণাঙ্গ আকারের মুক্তা হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ মাস। দুইজন শ্রমিক দিয়ে তিনি একই সাথে ৬ একর জলাশয়ে মাছের সাথে মুক্তার চাষ করছেন।

মুক্তা চাষে ঝিনুকের জন্য অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না। মাছের জন্য দেওয়া খাবার দিয়েই মুক্তা চাষ করা সম্ভব বলেন তিনি।

আবুল খান আশাবাদী তার চাষকৃত ২৫ হাজার ঝিনুক থেকে কমপক্ষে ৮০ হাজার মুক্তা সংগৃহীত হবে।

বর্তমানে তার উৎপাদিত এ ধরনের প্রতিটি মুক্তার বাজার দর ‘চার থেকে পাঁচশ’ টাকা।’

যেখানে তার তিন একর জলাশয়ে মুক্তা চাষে খরচ হবে পঞ্চাশ হাজার টাকা। মুক্তার পাশাপাশি একই সাথে পুকুরে মাছ থেকে আয় হবে তার।

তিমি মনে করেন, পুকুর, নদী, হাওড়-বাওড়ের ভরা এ দেশে সরকারি উদ্যোগে মাছের সাথে মুক্তা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে বেকার সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে।

তবে মাগুরার মুক্তা চাষি আবুল হোসেন খান বাংলাদেশে উৎপাদিত মুক্তা বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা চালু করতে সরকারকে  উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান।

এদিকে, বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট জানাচ্ছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া মুক্তা চাষের জন্য অনুকূল হওয়ায় তারা ১২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ২০১২ থেকে ২০১৯ মেয়াদে ‘মুক্তা চাষ প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ’ প্রকল্প করে।

মাগুরা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ হাসান সোহাগ বলেন, “মৎস্য অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের যে তিন-চারটি দেশের আবহাওয়া মুক্তা চাষের উপযোগী তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

“এ উপযোগী আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ করে মাগুরার আবুল হোসেন খান আজ সফলতার পথে।”

অল্প সময়ের মধ্যে তিনি চাষকৃত ঝিুনুক থেকে প্রায় লক্ষাধিক মুক্তা সংগৃহ করতে সক্ষম হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যা বাংলাদের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের সু-খবর।

মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তারা জেলায় মাছের সাথে মুক্তা চাষ করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করছেন বলেও জানান তিনি।

দু হাজার বছর আগে থেকেই স্বাদুপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদন হয়ে আসলেও বাণিজ্যিকভাবে মুক্ত চাষ শুরু হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি।

স্বাদু পানিতে চাষ করে উৎপাদিত চীনের মুক্তা বিশ্বের প্রায় আটশ থেকে হাজার মেট্রিক টন চাহিদার ৯৫ শতাংশ মেটাচ্ছে। আর এর প্রায় অর্ধেক এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং আমেরিকায় রপ্তানি হয়ে থাকে।

গহনা ছাড়াও হৃদরোগ, গলার ঘা, চোখের রোগের ওষুধে, ত্বকের ক্রিমে মুক্তা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া

ঝিনুকের খোলস এবং ভেতরের নরম অংশেরও বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। ঝিনুক মানুষ ও অন্য প্রাণির খাদ্য ছাড়াও এর খোলস থেকে চুন, বোতাম, গহনা তৈরিও হয়।