পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এসএম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের আদালতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুইজনসহ চারজন এই জবানবন্দি দেন।
গত ৭ অক্টোবর জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামে ফসলের মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৫৮ বছর বয়সী নূরজাহানের পাঁচখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নূরজাহান ওই গ্রামের আব্দুল বারেকের স্ত্রী।
ঘটনার পরদিন নূরজাহানের ছেলে হুমায়ুন করিব বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনা তদন্ত করতে গেলে হত্যাকাণ্ডে বাদীর জড়িত থাকার তথ্য মেলে বলে পুলিশ জানায়।
ডিআইজ আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “নূরহাজানের ছেলে হুমায়ুন কবির (২৮), তার এক বন্ধু, মামাত ভাই, মামাত বোনের স্বামী ও তিন প্রতিবেশীসহ সাতজন মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।
“নূরজাহানের প্রথম স্বামীর মৃত ছেলে বেলাল হোসেনের ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে মায়ের সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে হুমায়ুনের দ্বন্দ্ব বাধে।”
ডিআইজ আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে বলেন, “বেলাল জীবিত অবস্থায় গরু ও পুকুরের মাছ বেচাকেনার ব্যবসায় পুঁজির জন্য মাকে জিম্মাদার রেখে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় চার লক্ষ টাকা ঋণ নেন। সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদাররা মা নূরজাহান ও দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে হুমায়ুনকে চাপ দিতে থাকেন। হুমায়ুন তার মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক জমি ও বেলালের স্ত্রীর নামে থাকা ১০ শতক জমি বেচে পাওনা পরিশোধের চাপ দেন।
“মা এতে রাজি না হয়ে উল্টো হুমায়ুনের নিজস্ব ১৩ শতক জমি বেচে ভাইয়ের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অন্যদিকে ভাই দুলাল মিয়ার কাছে নূরজাহান ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনাদার। নূরজাহান সেই টাকার জন্য দুলালকে চাপ দেন। এতে দুলালের ছেলে কালাম ক্ষুদ্ধ হন নূরজাহানের ওপর।”
ডিআইজ আনোয়ার বলেন, এই দ্বন্দ্বের জেরে নূরজাহানকে তার ছেলে ও ভাতিজাসহ সাতজন মিলে হত্যা করেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে।
তাদের মধ্যে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলা তদন্ত করছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নূর ইসলাম মঙ্গলবার, নীরব বুধবার, হুমায়ুন ও সুমন বৃহস্পতিবার এই জবানবন্দি দেন।”
এছাড়া মামলার ৪ নম্বর আসামি কালাম ওরফে মামুনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে চেয় আবেদন করা হলে আদালত আগামী রোববার শুনানির দিন ঠিক করেছেন বলে জানান পরিদর্শক জাকির।