সিলেটে ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ নিহত: বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ মারা যাওয়া রায়হান আহমদ হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নিহতের মা সালমা বেগম।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2020, 09:05 AM
Updated : 18 Oct 2020, 09:05 AM

রোববার দুপুরে নিহত রায়হান আহমদের পরিবার ও বৃহত্তর আখালিয়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

একই সাথে হত্যার সাথে জড়িতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে হরতাল-সড়ক অবরোধসহ আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রায়হানের মামাতো ভাই শওকত আহমদ।

নগরীর আখালিয়াস্থ রায়হানের বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রায়হান হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মা সালমা বেগম আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে আখালিয়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে হরতাল, সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে এবং এর দায়ভার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, পুরো ঘটনার ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কর্তৃক একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রদান করতে হবে। একই সাথে এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের আইজিপির নির্দেশ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রায়হান হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, হত্যায় জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর ভূঁইয়াসহ দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, পলাতক এসআই আকবর ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইজিপির নির্দেশ, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রদান এবং নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন।

গত ১১ অক্টোবর ভোররাতে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।

এরপর এসআই আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত এবং তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে ১৩ অক্টোবর বিকাল থেকে এসআই আকবর পলাতক রয়েছেন।

এদিকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

যার মধ্যে ১৪টি গুরুতর আঘাত উল্লেখ করে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রায়হানের দুইটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়। মৃত্যুর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে এসব নির্যাতন চালানো হয়।

এছাড়া তার শরীরে চামড়ার নিচ থেকে প্রায় দুই লিটার রক্ত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন

সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম।

ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।