২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টা গ্রামের অংশ নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠনের পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম লিটন মেয়র হন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় এখনও তার পরিষদই বহাল রয়েছে।
প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার নির্বাচন ঠেকাতে এলাকা নিয়ে মামলার পেছনে তার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘আমরা বেনাপোলবাসী’র আহ্বায়ক মুস্তাক আহমেদ স্বপন বলেন, একবার নির্বাচন করে দুই টার্ম ক্ষমতায় রয়েছে মেয়র ও কাউন্সিলররা।
“ভোট না হলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয় না। আমরা ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে নাগরিক অধিকার ফিরে পেতে চাই।”
মেয়র কৌশলে নিজের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে পৌরসভার নির্বাচন আটকে রেখেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বড়আঁচড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন ভোট হচ্ছে না। ভোট না হওয়ায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আশা পোষণ করেন এমন নেতাকর্মীরা হতাশ।
বেনাপোল ১ নম্বর ওয়ার্ড সাদিপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় দশ বছর ভোট হচ্ছে না। আমরা সাধারণ ভোটাররা নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি।
২০১২ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে 'পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন' সভায় আট দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ পৌর এলাকাকে সম্প্রসারণ করে ২৪ বর্গকিলোমিটার করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
২০১৩ সালে বেনাপোল পৌরসভার সীমানা বাড়ানোর করার কাজ শুরু হলে বেনাপোলের নারায়ণপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তার এলাকার কিছু অংশ পৌরসভার সীমানায় অন্তর্ভুক্তি না করার জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন।
এরপর বেনাপোলের মিয়াদ আলী, আজিবর রহমানসহ আরো ১০ জন উচ্চ আদালতে আরো আট রিট মামলা করেন। অবশ্য নয়জন বাদীর মামলার বিষয়বস্তু একই রকম ছিল।
তারা উল্লেখ করেন, তাদের এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস, তারা কম আয়ের মানুষ,তাদেরকে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হলে বেশি বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। ফলে তারা পৌর এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না।
প্রায় সাত বছর ধরে আদালতে ঝুলে আছে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার নয়টি মামলা।
কবে মামলা নিষ্পত্তি হবে সেটি কেউ নিশ্চিত নয়। এতে পৌরসভার নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, এসব মামলা নিয়ে অনেকে না বুঝে 'রাজনৈতিক কারণে' আমাকে দোষারোপ করছেন।
মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি চান দাবি করে তিনি বলেন, তাই তিন বছর আগেও মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য আমি ও আমার পরিষদ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভার মামলা সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বেনাপোল পৌরসভার মামলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
নির্বাচনের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলেন তিনি।