গত মঙ্গলবার দুপুরে বানারীপাড়া উপজেলার তমাল তলায় এই ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এই সমাধি ও সীমানা প্রাচীর পুনর্নিমাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
সড়ক সংস্কারের কাজে নিয়োজিত ‘নির্মাণ শ্রমিকদের অসর্তকতায়’ এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ভাষ্য।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই নেতা মুক্তিযুদ্ধেরও সংগঠক ছিলেন। তিনি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করেছেন।
বানারীপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বেনি লাল দাস জানান, ১৯০৪ সালে ৮ ডিসেম্বর বানারীপাড়ার তমাল তলায় পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা। শরৎ গুহ ঠাকুরতা ও ভুবন মোহিনী দেবীর চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কুমুদ ছিলেন সবার ছোট।
শিক্ষাজীবন থেকে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এই কারণে ১৭ বার কারাগারে যেতে হয়েছে এই বিপ্লবীকে।
বেনি লাল আরও জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কুমুদ বিহারীর পরিবার ভারতে চলে গেলেও তিনি থেকে যান বানারীপাড়ায়। সোচ্চার ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন, শোষণের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান আমলেও আন্দোলনের কারণে আট বার জেলে যেতে হয়েছে তাকে। বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি এই বিপ্লবীর।
১৯৭৪ সালে এই স্বাধীনতা সংগ্রামী মৃত্যুবরণ করেন।
বেনি লাল দাস বলেন, “এই বিপ্লবীর স্মৃতি রক্ষা করার কথা ছিল; কিন্তু উল্টো মঙ্গলবার দিনে দুপুরে তার সমাধির দেয়াল ও স্মৃতিস্তম্ভের আংশিক আমি ভেঙে ফেলতে দেখেছি।”
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপিকা মেঘনা গুহ ঠাকুরতা।
এই ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একটি হলো সদর রোড। রাস্তাটি অনেকটা সরু হওয়ায় তা প্রশস্তকরণের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
“শ্রমিকদের অসর্তকতার কারণে রাস্তার পাশে থাকা বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার সমাধির সীমানা দেয়াল ভেঙে গেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভেঙে যাওয়া দেয়াল পুনঃনির্মাণসহ সমাধিস্থল আধুনিকায়নের আশ্বাস দিয়েছেন সংসদ সদস্য।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদার বলেন, উপজেলা ঈদগা সংলগ্ন এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি হলো এখানে ‘মডেল মসজিদ নির্মাণ’ করা হবে। এজন্য সরু সড়কটি কিছুটা প্রশস্ত করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
এই প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেন, “কুমুদ দা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। আমিও তার কাছ থেকে রাজনীতি শিখেছি। তার সমাধিস্থলটি জরাজীর্ণ ছিল। এটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টাইলস বসানো হবে। উপরে শেড দেওয়ার পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনও করা হবে।”
একটি নকশা তৈরি করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারি তহবিল না পেলে একাজ নিজের অর্থায়নে করে দেব।”