ফেনীতে নারী আসামিকে সাজা দিয়ে বাড়িতে পাঠাল আদালত

ফেনীতে মাদক মামলায় জরিমানাসহ এক বছরের কারাদণ্ড দিলেও সংশোধনের শর্তে এক নারী আসামিকে কারাগারের বদলে তার বাড়িতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2020, 08:35 AM
Updated : 15 Oct 2020, 11:29 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন এ রায় দেন।

রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামিকে আট শর্তে প্রবেশন সুবিধা দিয়ে সংশোধনের জন্য সুযোগ দেয় আদালত।

প্রবেশন (সংশোধন) সুবিধাসহ দণ্ডপ্রাপ্ত নাজমা খাতুন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউপির ডিএম সাহেব নগরের ইদ্রিস আলীর স্ত্রী।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর এই আদালতে অপর এক মাদক মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকেও সংশোধনের আটটি শর্তে প্রবেশনে দিয়েছিল।

ফেনী আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) নিমাই লাল সূত্রধর জানান, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই বিকালে নাজমাকে তার বাড়ির উঠানে মাদক বেচাকেনার সময় ২০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

ওইদিন বিজিবির হাবিলদার মো. মজিবুর রহমান বাদী হয়ে পরশুরাম থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরশুরাম থানার এসআই মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আসামির বিরুদ্ধে মাদক আইনের দুইটি ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করেন।

এপিপি আরও জানান, আদালত বিচারকাজ শেষে আসামি নাজমা খাতুনকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। 

“একই সাথে আসামি দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় ১৯৬০ সালের ‘দি প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী আটটি শর্তে পরশুরাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অধীনে সংশোধনের জন্য তাকে প্রবেশন দেন বিচারক।” 

২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবেশন (সংশোধন) প্রদানের এ আদেশ বদলবৎ থাকবে বলে এপিপি জানান।

আদালতের দেওয়া শর্তগুলো হল- মাদক গ্রহণ-পরিবহন-বিক্রি না করা, মাদক বিরোধী জনমত গঠন, মানুষকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করা, গাছ লাগানো, নিজের চার সন্তানকে লেখাপড়া শেখানো ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভর হওয়া।

প্রবেশনের আদেশে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তার বাড়ির আঙ্গিনায় এবং সরকারি সড়কে ১০টি করে ২০টি গাছ লাগিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তাকে লিখিত জানাবেন।

এ সময় আসামি প্রবেশনের শর্ত ঠিকঠাক পালন করেন কিনা তা প্রতি দুই মাস পরপর প্রবেশন কর্মকর্তা এবং পরশুরাম থানার ওসিকে তদারকি করতে বলেন বিচারক।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর একই আদালতে মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক বছরের কারাদণ্ড হলেও সংশোধনের উদ্দেশ্যে আটটি শর্তে প্রবেশনের সুযোগ পান এনায়েত পাটোয়ারী নামে আরেক ব্যক্তি।

তিনি ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের উত্তর তারাকুচা গ্রামের এরশাদ পাটোয়ারীর ছেলে। ফেনীর আদালতের অপরাধের ধরণ বিবেচনায় সেইটিই ছিল প্রথম প্রবেশন আদেশ।

দি প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স

এই আইনের আওতায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালত প্রথম ও লঘু অপরাধে জড়িত শিশু কিশোর বা প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে শর্ত সাপেক্ষে এক থেকে তিন বছরের জন্য প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারে। তবে শিশু-কিশোরদের জন্য এ আইনগত সুবিধা অগ্রাধিকার পায়।

শিশু আইন ২০১৩ এর আওতায়ও শিশু-কিশোরেরা শিশু আদালতের মাধ্যমে প্রবেশন ব্যবস্থার সুযোগ পায়।

উপরোক্ত দুইটি আইনের আওতায় বিচারকদের সহায়তা করার জন্য, আদালতের শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য এবং তত্তাববধান ও সংশোধনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসারদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।