বগুড়ায় খেয়াঘাটে আয় কোটি টাকা, তবু নেই যাত্রীসেবা

একে একে দেশের ছোট-বড় সব নদীর ওপর সেতু হওয়ায় খেয়া পারাপার আগের গুরুত্ব হারিয়েছে। তবে বগুড়ার চরাঞ্চলের মানুষদের এখনও নদী পাড়ি দিতে খেয়া নৌকাই একমাত্র সম্বল।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2020, 07:37 AM
Updated : 14 Oct 2020, 07:37 AM

প্রতিবছরই সরকারিভাবে খেয়া চলাচলের বগুড়া- সিরাজগঞ্জের নদীর ঘাটগুলো ইজারা দিয়ে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও বছরে পর বছর সেখানে যাত্রীসেবার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বাস-ট্রেন যাত্রীদের সুবিধার জন্য এসব যানবাহনের স্টেশনে যাত্রীদের জন্য যৎ সামান্য যাত্রীসেবার ব্যবস্থা থাকলেও খেয়াঘাটের প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নাই।

বগুড়ার সরিয়াকান্দী উপজেলার কালিতলা ঘাট, ধুনট উপজেলার শহরা বাড়ী, বানিয়াজান ঘাট এবং সিরাজগন্জ জেলার ঢেকুরিয়া খেয়া ঘাট এই চার ঘাট সর্বশেষ টেন্ডারের মাধ্যমে ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আসাদুর রহমান দুলু জানিয়েছেন।

ইজারা দিয়ে রাজস্ব অর্জিত রাজস্ব কালভার্ট, রাস্তা, সেলাই মেশিন বিতরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয় বলে জানান তিনি।

অথচ এসব নৌঘাটে যাত্রী ছাউনিসহ লোকজনের সুযোগ সুবিধার জন্য কোনো উন্নয়ন উদ্যোগ নাই। রোদ-বৃষ্টিতে যমুনার চর এবং আন্তঃজেলা নৌপথে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া, সিরাজগন্জ জেলার জামতৈল, মানিক দাইর, ধারাবর্ষা, পাকুড়িয়া, ডাকাতমারা, বোহাইল, মাঝিরা, ছোনপচা, শানবান্ধাসহ প্রায় ২০টি চর ও এলাকার মানুষদের যাতায়াতের মাধ্যম এসব খেয়া নৌকা। 

প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চর এলাকায় নৌকায় পারাপার হয়। চরে হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম থাকায় এবং সরকারি অফিস না থাকায় কাজে আসতে হয় চর থেকে। 

এ ছাড়াও বগুড়া থেকে জামালপুর জেলায় নৌপথে প্রায় শত কিলোমিটার পথ কম হওয়ায় মাদারগন্জ, তারাকান্দী, সরিষাবাড়ী হয়ে নদীপথে নৌকায় লোকজন কম খরচ এবং কম সময়ে যাতায়াতের জন্য নৌকাকেই বেছে নিয়ে থাকে।

অথচ সেখানে সরকারিভাবে যাত্রী ছাউনি, শৌচাগারসহ যাত্রী সেবার কোনো উদ্যোগ নাই।

বগুড়ার সারিয়াকান্দী, ধুনট উপজেলাট শহরা বাড়ী, সিরাজগন্জ উপজেলার ঢেকুরিয়া খেয়া নৌঘাট ঘুড়ে জানা যায় এসব সমস্যা।

সরিয়াকান্দী খেয়াঘাটে কথা হয় জামতৈলের রমিছা বেগমের সাথে।

তিনি জানালেন, ঘাটের কোনো শৌচাগার না থাকায় একবার খুবই অসুবিধায় পড়েছিলেন তিনি। 

বিপাকে পড়ে ঘাটের পাশের এক বাড়ির সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন রমিছা।

ধারাবর্ষার বাসিন্দা আলীম জানালেন, চরে কোনো হাট- বাজার না থাকায় এবং অফিস আদালতে স্কুল- কলেজে শিক্ষার্থীদের আসতে খেয়া নৌকা তাদের এক মাত্র ভরসা। কিন্তু যাত্রীদের কোনো সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা নেই।

ধুনটের শহরাবাড়ী খেয়াঘাটেও যাত্রীদের একই অভিযোগ।

সেখানকার বাসিন্দা আবুল কাসেম জানান, বৃষ্টির সময় তাদের খুবই সমস্যা হয়।

“যাত্রী ছাউনি নেই। টয়লেট নেই। কাদা-পানি পার হয়ে খেয়াঘাটে আসতে হয়।”

এমন অভিযোগ বানিয়াজানের কালীবাড়ি খেয়াঘাটসহ সিরাজগঞ্জ জেলার ঢেকুরিয়া খেয়া পারাপারের যাত্রীদেরও।

সারিয়াকান্দী খেয়াঘাটের ইজারাদার বলেন, বাৎসরিক ৭৪ লাখ টাকায় খেয়াঘাট ইজারা নিয়েছি।

“বারবার জেলা পরিষদকে বলেও ঘাটের কোনো সংস্কার পাইনি। টয়লেট নাই। ঘাট থেকে নৌকায় ওঠার সু-ব্যাবস্থাও নাই।”

নদীতে পানি কমে গেলে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা তাদের নিজেদের খরচায় তৈরি করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অথচ এসব করার কথা জেলা পরিষদের।

গত শুষ্ক মৌসুমে রাস্তা করতে তাদের ছয় লাখ খরচ হয়ে বলে দাবি করেন তিনি।

শহরাবাড়ি খেয়াঘাটের ইজারাদার হযতর আলী জানান, বর্ষাকালে যাত্রীদের কাদা-পানি মাড়িয়ে খেয়া ঘাটে আসতে হয়।

নিজের টাকায় সারা বছর রাস্তা মেরামত করেন জানিয়ে তিনিও বলেন, ইজারার টাকা থেকেই খেয়া ঘাটের সংস্কার করা উচিত। কিন্তু কিছুই করেনা জেলা পরিষদ।

“এখানে নেই যাত্রী ছাউনি, নেই টয়লেটের ব্যবস্থা।”

এবার যাত্রীদের চলাচলে রাস্তা সংস্কারে তারও প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলছেন তিনি।

ঢেকুরিয়া খেয়া ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক ময়নুল হাসানেরও একই অভিযোগ করেন।

বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান দুলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নজরে আসায় খেয়াঘাট উন্নয়নে সেখানে টিউবওয়েল, টয়লেট, যাত্রী ছাউনিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা হয়েছে।

“দ্রুততম সময়েই কাজগুলো করা হবে।”