কুকুরের খামারে সফল খুলনার গালিব

কুকুরের খামার গড়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন দেশের বাইরে লেখাপড়া করা ও পশুপালনে প্রশিক্ষণ নেওয়া খুলনার তরুণ উদ্যোক্তা সাদিকুর রহমান গালিব।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 04:47 PM
Updated : 13 Oct 2020, 04:52 PM

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আমভিটা এলাকায় গালিব `খুলনা ক্যানেল’ নামের এই খামার গড়ে তোলেন।

গালিব জানান, ২০১৫ সালের দিকে তিনি ভারত থেকে স্নতকোত্তর শেষ করেছেন। এরপর থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে কৃষি ও পশুপালনের উপর বিশেষ কোর্স করেন। এরপর দেশে ফিরে নিজ এলাকায় ছয় একর জমিতে একটি কৃষি খামার গড়ে তোলেন।

তিনি জানান, জমিতে সীমানা প্রাচীর না থাকায় চোরের উপদ্রব সামলাতে তিনি পাহারার জন্য ৩০ হাজার টাকায় একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর কেনেন। এর কিছুদিন পর আরেকটি মেয়ে জার্মান শেফার্ড কুকুরও কেনেন। এরপর কুকুরের প্রজনন শুরু হয়।

এভাবে এক সময় তার মধ্যে কুকুর লালন-পালন ও প্রজননের নেশা ধরে যায় বলে জানান গালিব।

তা থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে গালিবের কুকুরের খামার। এখন কুকুর বিক্রি করে বিপুল টাকা আয় করছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

সাদিকুর রহমান গালিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার খামারে পাঁচ প্রজাতির ২৭টি কুকুর রয়েছে। পাঁচটি মেয়েসহ ‘জার্মান শেফার্ড’ ১৩টি; যার মধ্যে তিনটি ছানা।

‘রটওয়েলার’ জাতের রয়েছে পাঁচটি, যার মধ্যে দুটি হলো মা। তিনটি ছানার মধ্যে পুরুষ বা নারী চিহ্নিত করা যায়নি।

‘পিটবুল টেরিয়ার’ প্রজাতির কুকুর রয়েছে তিনটি, যার মধ্যে একটি মেয়ে। ‘লাসা আপসো’ (তিব্বত) জাতের কুকুর রয়েছে তিনটি, যার একটি মেয়ে। ‘স্পিড’ (জার্মানি) জাতের একটি মেয়েসহ রয়েছে তিনটি।

সরেজমিনে খামারে দেখা গেছে, খামারে নয়টি পুকুর, বাগান, সবজি আর নানা প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। পিচঢালা রাস্তা থেকে খামারের প্রধান ফটকে নামতেই চার-পাঁচটি কুকুর ছুটে আসে।

“পরে মনিবের নির্দেশে তারা অল্প সময়েই বুঝে যায় আগতরা ‘অতিথি’, শত্রু নয়। পরক্ষণে কুকুরগুলো মুখ দিয়ে আমাদের শরীর ঘেঁষে আদর করতে থাকে।”

প্রধান ফটক পেরিয়ে মূল খামারে গিয়ে দেখা যায়, চার-পাঁচ জন শ্রমিকের পাশাপাশি খামারের মালিক নিজেই কুকুরগুলোর পরিচর্যা করছেন। এদের একেকটির নাম ধরে ডাকতেই ছুটে আসছে মনিবের কাছে।

গালিব বলেন, তার খামারে একাধিক মেয়ে কুকুর এখন বাচ্চা দেওয়ার অপেক্ষায়। মায়ের গর্ভে থাকতেই এগুলো বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে টাকা অগ্রিমও দিয়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৪৫ দিন পর ক্রেতারা নিয়ে যায়।

তিনি জানান, এই পর্যন্ত ৮৫টি কুকুর ছানা বিক্রি করে ১২ লাখ টাকারও বেশি আয় করেছেন। সরাসরি খামার থেকে ছাড়াও অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে এসব কুকুর।

গালিব জানান, কুকুর পালনে প্রতি মাসে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন মুরগি, গরু ও খাসির মাংস এবং খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। স্বাস্থ্য পরিচর্যার দিকে খেয়াল রেখে নিয়ম করে খাওয়ানো হয় কৃমিনাশক ট্যাবলেট। আর প্রতি মাসে টিকা দেওয়া হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম আউয়াল হক বলেন, “খুলনা ক্যানেল নামে ওই খামারটিতে যাওয়ার সৌভাগ্য এখনও আমার হয়নি। তবে খামারটির মালিক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে সরকারিভাবে খামারটি নিবন্ধন করার কথা জানিয়েছি।”

আউয়াল হক আরও জানান, নিরাপদ জায়গা থাকলে কুকুরের খামার করতে খুব বেশি ঝামেলা নেই। তবে জলাতংক রোগ রোধে এদের বছরে একবার এআরভি ভ্যাকসিন দিতে হয়।