টেকনাফের তল্লাশি চৌকিতে ধর্ষণের খবর ভিত্তিহীন: বিজিবি

সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর এবার যৌন নিপীড়নের এক ঘটনার খবরে আবারও আলোচনায় উঠেছে কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকি।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 07:24 PM
Updated : 11 Oct 2020, 07:36 PM

টেকনাফে বিজিবির এক তল্লাশি চৌকিতে এক এনজিওকর্মী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলেও তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।

তল্লাশি চৌকিতে ওই নারীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের বাক-বিতণ্ডা হওয়ার কথা বলেছেন স্থানীয় বিজিবি কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় ওই নারীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ রোববার নাগাদ পাওয়া যায়নি বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা, যা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।

গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফে বিজিবির দমদমিয়া তল্লাশি চৌকির ঘটনা এখন আলোচনায়।

দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সী ওই নারী জাতীয়ভিত্তিক একটি এনজিওর টেকনাফের হ্নীলা শাখায় কাজ করছেন এবং হ্নীলাতেই থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একটি সভায় অংশ নিতে টেকনাফ যাওয়ার পথে বিজিবির নারী সদস্যরা তাকে তল্লাশির জন্য পোস্টের কক্ষে নেন। সেখানে পুরুষ সদস্যরা তাকে ধর্ষণ করে।

পরে ওই নারী তার অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের জানিয়ে বাসায় চলে যান বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন এনজিওটির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর।

ওই এনজিওটির কক্সবাজার প্রকল্প সমন্বয়কারীকে উদ্ধৃত করে যুগান্তর লিখেছে, ওই নারী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে মামলা করতে পারেন, আর এতে তাকে সবধরনের আইনি সহায়তা দেবেন তারা।

রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ওই নারী ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওই নারী ফোন ধরেননি। এনজিওটির কক্সবাজার প্রকল্প সমন্বয়কারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী ওই নারীকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সকালে এক নারী এনজিওকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। তার সঙ্গে কথা বলার পর তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

“ওই নারী চিকিৎসকদের বলেছেন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এরপর তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। পরে ওই নারীর দেওয়া বক্তব্যগুলো নিয়মানুযায়ী হাসপাতালের নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।”

এই চিকিৎসক বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি ‘শ্লীলতাহানির পর্যায়ের’ বলে তাদের মনে হয়েছে।

“তার ডিএনএসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রকৃত বিষয় জানানো সম্ভব হবে।”

ওই নারী শনিবার সকালে হাসপাতাল ছেড়েছেন বলে জানান তিনি।

ওই নারী হ্নীলা ইউপির সাবেক এক সদস্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

বাড়ির মালিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই নারী তাকে ধর্ষণের বিষয়ে কিছু বলেননি।

ঘটনার বিষয়ে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই নারী বিজিবির কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে এ ধরনের একটি বিষয় ‘সরকারি গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা’র মাধ্যমে তিনি জেনেছেন।

তবে এতে ধর্ষণের যে কথা বলা হচ্ছে তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বনোয়াট’ বলে দাবি করেন তিনি।

বিজিবি কমান্ডার ফয়সল বলেন, “এ ধরনের তথ্য যে সত্য নয়, তার সপক্ষে বিজিবির কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বিজিবির চেকপোস্টে দায়িত্বরত সদস্যদের তল্লাশিসহ দায়িত্ব পালনের ভিডিও ফুটেজ (সিসিটিভি) ধারণ করা আছে। অন্যান্য নারীদের যেভাবে তল্লাশি করা হয়, ঠিক একইভাবে তাকেও তল্লাশি করেন নারী বিজিবির সদস্যরা।”

ঘটনা কী ঘটেছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অটোরিকশায় থাকা যাত্রীদের তল্লাশি করতে করতে চাইলে ওই নারী বিজিবির সদস্যদের বাধা দেন। এ সময় তিনি বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিজিবির নারী সদস্যরা তাকে চেকপোস্টের একটি কক্ষে এনে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগপত্র ও দেহ তল্লাশি করেন।”

ঘটনার দিন ওই নারীকে বহনকারী অটোরিকশা চালক আব্দুল আমিন বলেন, এনজিও কর্মীসহ দুজন নারী ও তিনজন পুরুষ যাত্রীকে নিয়ে টেকনাফ যাওয়ার পথে ‘যথানিয়মে’ ওই নারীকে তল্লাশি করেন দমদমিয়া চেকপোস্টের বিজিবি নারী সদস্যরা।