‘ধর্ষণের কারণ পর্দা না’- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্ল্যাকার্ড হাতে তরুণী

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক নারী প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে এসেছেন আলোচনায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 03:58 PM
Updated : 11 Oct 2020, 05:41 PM

গত বুধবার (৭ অক্টোবর) জেলা শহরের প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ানো এই তরুণীর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘ধর্ষণের কারণ পর্দা না, ক্ষমতা’।

তার ছবি দ্রুতই ইন্টারনেটে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং সিলেটের এমসি কলেজে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছে।

এ বিষয়ে নানামুখী বক্তব্যের মধ্যে কেউ কেউ ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছে।

এর মধ্যেই বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর কর্মীদের নেতৃত্বে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভের সময় তাদের সামনেই প্ল্যাকার্ড হাতে ওই তরুণী অবস্থান নেন।

স্থানীয়রা ওই তরুণীর পরিচয় জানতে না পারলেও সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে বাহবা দিয়েছেন।

রাতিন রহমান নামের একজন তার ফেইসবুকে লেখেন- “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করে বক্তব্য দেওয়া এবং মিছিল করা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এই প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একাই একটা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন এই সাহসী নারী৷ আর কেউ না, স্রেফ তিনি একাই, একটা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদী পদক্ষেপে জানিয়ে দিয়েছেন ধর্ষণের জন্য দায়ী স্রেফ ধর্ষকই, তাকে ব্যাক্তি অবস্থান ও সমাজের নানা জায়গা থেকে সাহস যোগানো এবং রক্ষার জন্য এইরকম মিছিল চালিয়ে যাওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। কখনই পোশাক না৷

“এই নারীকে এবং তার সাহসকে অভিবাদন। স্যালুট!”

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারীদের কেউ কেউ এখনও পণ্য মনে করে। এটি একটি অসুস্থ মানসিকতা। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। পর্দা এখানে মুখ্য নয়। নুসরাতসহ অসংখ্য নজির রয়েছে যারা পর্দা করেও বাঁচতে পারেননি। তাই অসুস্থ এবং বিকৃত মানসিকতা পরিবর্তন না করলে সমাজ থেকে এ ব্যাধি মুক্ত করা সম্ভব নয়।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আবদুন নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ওই তরুণীর সাথে একমত। দুর্বলের প্রতি সবলের আক্রমণ সবসময়ই হয়। মানুষের মানসিক অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণ বাড়ছে।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হেফাজত ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুফতি এনামুল হাসান বলেন, “নিজের শরীর ঢেকে রাখার নামই হচ্ছে পর্দা। আমারা পর্দাকে এজন্যই গুরুত্ব দেই। কিছু লোক নীতি নৈতিকতা বোধ হারিয়ে নারীদের উপর হায়েনার মতো হামলে পড়ে। আর এজেন্যই পর্দার গুরুত্ব রয়েছে।”

ওই তরুণীর বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “ধর্ষকরা অনেক সময় ক্ষমতাবানদের সহায়তায় ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আইনের ফাঁক ফোকরে বেঁচে যান।”

ফেইসবুকে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় ওই তরুণীর নাম ফারজানা ফাহমী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী এক সময় যমুনা টিভিতে কাজ করতেন বলেও তার ফেইসবুক একাউন্টে তথ্য দেওয়া আছে।

তিনি ওই প্রতিবাদ নিয়ে এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন- “প্রতিবাদটা জারি রাখা খুবই জরুরী। শুধুমাত্র ধর্ষণ হলেই প্রতিবাদ আর বাকি মলেস্টেশন, হ্যারেজমেন্ট এগুলার জন্য কোন প্রতিবাদ না করলে তো চলবে না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোষাকও দায়ী। এই ধারণা মানুষ শুধু পোষণ করে না, রাস্তা-ঘাটে ওয়াজ মাহফিলে ঘোষণা দিয়ে বেড়ায়।

“প্রতিবাদটা শাহাবাগ কেন্দ্রিকতা থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে দেশের প্রতিটা কোনায়। মানুষের মাঝে প্রশ্নগুলো তুলে দিতে হবে। আসলেই কী ধর্ষণের বীজ পর্দায়? নাকি ক্ষমতায়? যারা পোষাকের দোষ খোঁজে তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে।”