স্থানীয়দের ভাষ্য, কর্তৃপক্ষের ‘নজরদারি না থাকার’ কারণে জেলার মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোতে প্রতিনিয়তই মাছ শিকার করা হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আফতাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলায় ১১টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। অভয়াশ্রমগুলোতে বাঁশের খুঁটির উপর লাল পতাকার নিশানা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, যেখানে ‘মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ’ লেখা রয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম নির্ধারিত এলাকার বাইরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে চলারও জন্যও বলা হয়।
মৎস্য সংরক্ষণ আইন অমান্যকারীর জেল কিংবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে বলেও ওই সাইনবোর্ডে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, বলেন আফতাব।
প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পাশাপাশি সরকারিভাবে অভয়াশ্রমগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। লক্ষ্য অভয়াশ্রমগুলো বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা।
সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশ্চিম পাশে টাঙ্গন নদী ও সদরের বুড়িরবাঁধ এলাকার সুক নদীর অভয়াশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শৌখিন মাছ শিকারী বড়শি দিয়ে এবং জেলেরা জাল দিয়ে ছোট ও বড় মাছ শিকার করছে।
স্থানীয়রা জানান, অভয়াশ্রমগুলোতে রুই, কাতলা, ট্যাংরা, পুঁটি, শোলসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ রয়েছে। মৎস্য বিভাগের নজরদারি না থাকায় প্রতিদিন জেলার মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলে ও শৌখিন মাছশিকারিরা জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে।
টাঙ্গন নদী অভয়াশ্রমে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন প্রদীপ কুমার নামের একজন।
জেলে ধনঞ্জয় রায় বলেন, “নদীতে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে সেই টাকায় আমার সংসার চলে। এক কথায় বলতে পারেন মাছ শিকার আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনের পথ। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে আমরা অন্য পেশায় যেতে পারব।”
বুড়িরবাঁধ এলাকার মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করছেন শৌখিন মাছ শিকারী শফিকুল ইসলাম।
সম্প্রতি সদর উপজেলার বুড়িরবাঁধ এলাকার সুক নদীর মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে মাছ ধরার অভিযোগে আট জনকে কারাদণ্ড ও দুই জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সুসাশনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার অভয়াশ্রম থেকে মা মাছ শিকার করা উদ্বেগের বিষয়। অভয়াশ্রমই যদি মাছ শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা না পায় তাহলে মাছ কেমন করে রক্ষা পাবে।
“আমি মনে করি মৎস্য বিভাগের নজরদারির অভাবের কারণে অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ শিকার চলছে। মা মাছ ও দেশি প্রজাতির মাছকে বাঁচাতে আইনের প্রয়োগ প্রযোজন।”
টাঙ্গন নদীর মৎস্য রাণী অভয়াশ্রমের স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর বর্ষায় অভয়াশ্রমের খুঁটি ও বেড়া বিলীন হয়ে যায়। বরাদ্দ না থাকায় পরে সেখানে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অরক্ষিত হয়েই পড়ে রয়েছে অভয়াশ্রমটি।
স্থানীয় মৎস্য সমিতির সদস্যরা যদি অভয়াশ্রমগুলো দেখভাল না করেন তাহলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে অভয়াশ্রমগুলোতে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে অনেককেই জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”