শাবিতে ভর্তি 'নতুন পদ্ধতিতে'

জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল নির্ধারণ ঘোষণার পর 'নতুন পদ্ধতিতে' স্নাতকে ভর্তির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হোসাইন ইমরান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2020, 12:16 PM
Updated : 8 Oct 2020, 12:16 PM

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আটকে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বুধবার ঘেষণা দিয়েছেন।

এই ঘোষণার পর দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব। অনেকের মতে যেসব শিক্ষার্থী জেসএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ করেছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে প্রতিকূলতার শিকার হবেন। কেননা এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করার সুযোগ তারা পাবেন না, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এইচএসসির ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা নতুন সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নতুন পদ্ধিত, নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করব; যাতে কোনো শিক্ষার্থী বঞ্চিত না হয়। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য এক্সপার্ট ও পলিসি মেকারদের সাথে কথা বলব।"

গত ১ এপ্রিল থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যাতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর।

কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়; এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও আটকে যায়।

বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যায়, তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক আর নানা পরিকল্পনা চলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে।

অবশেষে বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা অতিক্রম করে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।”

উচ্চ মাধ্যমিকের পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে ভর্তিতে এমসিকিউ বা লিখিত পরীক্ষার বাইরে একটি নির্দিষ্ট নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে থাকে। ফলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা কে কোন পেশায় যেতে পারবে তা এই পর্যায়েই অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়ে যায়।

বর্তামনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৭০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। আর ৩০ নম্বর থাকে এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে এসএসসির জিপিএ ২ দিয়ে গুণ (২*৫=১০) আর এইচএসসির জিপিএ ৪ দিয়ে (৪*৫=২০) গুণ করে মোট ৩০ নম্বর মূল্যায়ন করা হয়।

পরীক্ষা না নিয়ে এইচএসির ফল নির্ধারণ হলে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা যাচাই হবে না। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ২০ নম্বরে জেসএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ করা শিক্ষার্থীর বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত নম্বর পেয়ে গিয়ে মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকবে।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, "আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করব। বিগত বছরগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করব যাতে কোনো শিক্ষার্থী বঞ্চিত না হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যাতে মেধার মূল্যায়ন হয়।"

তবে 'বিশেষ পদ্ধতি' বা 'বিশেষ ব্যবস্থা' কীরকম হবে তা এখনই খোলসা করছেন না উপাচার্য।

"আমরা নীতি নির্ধারকদের সাথে কথা বলব; এক্সপার্টদের সাথেও কথা বলব; আলাপ-আলোচনা করব। অতটুকু আশ্বস্ত করতে পারি, এমন পদ্ধতি গ্রহণ করব, যাতে সব শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পায়, কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়।"