এসব জমিতে সমিতি ‘অবৈধভাবে’ একাধিক ভবন নির্মাণও করছে বলেও জেলা ও দায় জজ আদালতের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাট নতুন আদালত এলাকায় চারতলা ভবন। তারপাশে আরো একটি নতুন চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় মোক্তার বার নামে পরিচিত তিনতলা ভবনটি বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির রাকিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিচার বিভাগের ১৯১৫ এবং ১৯২৯ সালের আইন অনুযায়ী বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতিকে বার লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য দুই দফায় নতুন এবং পুরাতন আদালত এলাকায় পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ জমির একটি অঙ্গীকারনামা দেওয়া হয়েছে।
“তারা তাদের অঙ্গীকারনামা অমান্য করে অতিরিক্ত আরো দুইটি ভবন নির্মাণ করেছে।
আইনজীবী সমিতি নতুন একটি ভবনের দাবি তুললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘তাদের নিজস্ব মালিকানায় থাকা জমিতে’ ছয়তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এ বরাদ্দের পর ভবন নির্মাণে জমি চাইলে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ জমি ‘মৌখিকভাবে’ বরাদ্দ দেয় বিচার বিভাগ। তবে এ বরাদ্দের সীমা ছাড়িয়ে আইনজীবী সমিতি ৪৪ শতাংশ জমি দখল করেছে বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।
আদালতের পক্ষে নাজির রাকিবুল বলেন, ১৯১৫ সালের সেক্রেটারি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া আইনে আইনজীবীদের বার লাইব্রেরি করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।
সেই আইন অনুযায়ী ১৯২৯ সালের ৪ এপ্রিল ১৪৮১ নম্বর দলিলে বাগেরহাটের আইনজীবীদের বার লাইব্রেরি করার জন্য ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ জমির অঙ্গীকার নামা দেওয়া হয়। সেখানে দালান-১ নামে পরিচিত ভবনে বারের কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রয়েছে।
তবে ওই অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ চাইলে ওই বার লাইব্রেরির জায়গা ছয় মাসের ভেতরে ফেরত দিতে হবে এবং এ বার লাইব্রেরির জায়গার বাণিজ্যিক ব্যবহার করা যাবে না।
“এ কমিটির কাছে আইনজীবী সমিতি এখনও মালিকানা দাবি করা জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।”
এ সময়ে সেখানে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ ভঙ্গ করে তারা কাঁটাতার দিয়ে জমি ঘিরেও নেন এবং কাজ অব্যাহত রাখেন বলেন নাজির।
অন্যদিকে, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের লোকজন গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তি ফলক ভাঙার, নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর ও নির্মাণ সামগ্রী লুটপাট করে বলে অভিযোগ তোলেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা।
বরং জেলা আইনজীবী সমিতি এ জমি তাদের করে নিতে নানা পন্থা আঁটে দাবি করে তিনি জানান, হাল জরিপ বিআরএস-এ মাঠ পর্চায় ওই এলাকার এক দশমিক ৭৩৬ একর জমি বারের নামে নামে রেকর্ড করায় তারা।
“অবশ্য ২০০৩ সালের ১৫ অগাস্ট প্রকাশিত ওই মাঠ জরিপের আগে ১৯২৩-২৪ সালের সিএস ম্যাপে জমিটি বিচার বিভাগের নামে রেকর্ড ছিল। এরপর কোনো দলিল হয়নি, বিচার বিভাগ ওই জমি বারের কাছে বিক্রিও করেনি।”
এ বিষয়ে উত্থাপন করলে বাগেরহাট ভুমি জরিপ কার্যালয় (সেটেলমেন্ট অফিস) ২০১৭ সালে তা সংশোধন করে পুরো জমিটুকু বিচার বিভাগের পক্ষে রায় দেয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বরের ওই আদালত কর্মচারীদের হামলার অভিযোগ এনে পরদিন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছিল এ আইনজীবী সমিতি।
সেদিন আদালতপক্ষের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১৯১৫ ও ১৯২৯ সালে বিচার বিভাগ বাগেরহাট বার লাইব্রেরিকে জমি দেয়। আমরা সেই জমিতে স্থাপনা তৈরি করে আমাদের কার্যক্রম পরিচালন করছি। আইনের বাইরে আমরা কিছুই করছি না।
তবে বিচার বিভাগের জমি পাওয়ার শর্ত লঙ্ঘন করে একের পর এক ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এ আইনজীবী নেতা।