বুধবার বিকালে খাদিজার বাবা মোখলেছ মিয়া জানান, ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার মেয়ের চিকিৎসা চলছে।
“সেখানেই আছি।”
এসিডদগ্ধ খাদিজার বাবা রংমিস্ত্রি মোখলেছ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা উপজেলার নয়নপুর গ্রামে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া নোয়াপাড়া গ্রামে হোসেন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মোখলেস মিয়ার ঘরের জানালা দিয়ে তার মেয়ে খাদিজার গায়ে এসিড ছুড়ে মারে দুর্বৃত্ত।
এতে ১৩ বছরের ওই কিশোরীর শরীরের ‘৪৫ থেকে ৫০ ভাগ’ ঝলসে যায়।
তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়।
খাদিজার বাবা মোখলেছ মিয়া বলেন, আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় চিকিৎসকরা বলার পরও মেয়েকে নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়েছিলাম।
পরে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেন।
“এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. মীর্জা তায়েবুল ইসলামের পরামর্শ অনুযায়ী খাদিজাকে নিয়ে ঢাকায় আসি। ডা. মীর্জা তায়েবুল বলেছেন, খাদিজার ‘৪৫ থেকে ৫০ ভাগ এসিডে ঝলসে গেছে, গভীর ক্ষতও রয়েছে।”
এসিডে ঝলসানো কিশোরীর পরিবারের অসঙ্গতির কথা ভেবে আর্থিক সহায়তায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার জানান, সরকারি মেডিকেলের চিকিৎসার বাইরে সেবা ও সুস্থতার জন্য আনুষঙ্গিক যে খরচের ভার তিনি নিয়েছেন।
“পুলিশ মানুষের সেবায় সব সময় নিয়োজিত থাকে। আমরা এসিডদগ্ধ খাদিজার খোঁজ নিয়মিত রাখছি।”
ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসিডদগ্ধ খাদিজার অসহায় পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এসিডে নিক্ষেপের ঘটনার পরদিন কিশোরীর বাবা মোখলেছ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।
রং মিস্ত্রি মোখলেছের করা এ মামলার পরদিন শনিবার রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে মো. হারুনকে (৩১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওসি জানান, গ্রেপ্তার হারুনের বাড়ি চট্টগ্রামে। রংমিস্ত্রি হারুন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, তারও আগে ঢাকায় রিকশা চালাতেন।
“গত চার মাস ধরে একই বাড়িতে মোখলেছ মিয়ার পরিবারের সাথে থাকতেন হারুন। ঘটনার আগের দিন খাদিজার পরিবারের সাথে হারুনের মনোমানিল্য হয়।”
গ্রেপ্তার হারুন এই এসিড নিক্ষেপ করেছে বলে কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলেন ওসি।
তিনি আরও জানান, মামলা তদন্ত করে দেখা যায় খাদিজার মায়ের সন্দেহের তালিকায় থাকা আপন এবং জাহিদ নামের অপর দুই তরুণ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। হারুন একাই এসিড নিক্ষেপ করেন।