মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া নাম ধরে ‘খুনিদের’ গ্রেপ্তার

গলা কেটে অটোরিকশা থেকে ফেলের পর মাটি লিখে গেলেন ‘ঘাতকদের’ নাম। সেই নাম ধরেই একে একে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2020, 12:32 PM
Updated : 30 Sept 2020, 12:32 PM

বুধবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

হত্যায় প্রত্যক্ষ জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. রুবেল (২৯), মো. আকরাম মোল্লা (২১), হাসান (২২) এবং মো. রাজেন (২৪)। এদের মধ্যে রাজন ও রুবেল আপন ভাই।

এছাড়ার অপর গ্রেপ্তাররা হলেন, আমির বেপারী (৪০), তোফায়েল (৪০), সবুজ শেখ (৩০) এবং কাজল শেখ (৩১)।

নিহত আশরাফুল ইসলাম (৩০) শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউয়িনের মধ্য বাঘড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। আগের দিন তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় জানাতে গিয়ে পুলিশ নাম বিভ্রাট করেছিল।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের চানখার বাড়ি এলাকায় তাকে ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

রাতেই ‘মূল হত্যাকারীদের’ গ্রেপ্তারের পর অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সদস্যদের ধরতে সকাল পর্যন্ত সময় লাগে জানিয়ে লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, “মৃত্যুর আগে মাটিতে আশরাফুলের লিখে যাওয়া নাম ধরেই হাসান ও রাজাকে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারের পরই বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনা।”

গত মঙ্গলবারের এ হত্যাকণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে কলমা থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশা এবং গোয়ালীমান্দ্রা খাল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে বলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের বাঘড়ার থেকে রুবেল আর আকরাম লৌহজংয়ে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের অটোরিকশা ভাড়া করেন। পথে শ্রীনগরের বেজগাও পুরোনো ফেরি ঘাট এলাকা থেকে অটোতে ওঠে হানান ও রাজেন।

তিনি বলেন, অটোর সামনে চালকের বাম পাশে বসা হাসান আশরাফুলের এক হাত চেপে ধরে আর ডানপাশে বসা রাজেন অপর হাত চেপে ধরে।

আর পেছনে বসা আকরাম গামছা দিয়ে গলায় চেপে ধরে। এরপরই পেছনের আরেক ছিটে বসা রুবেল গলায় ছুরি চালায়। এরপর লৌহজংয়ের কারপাশার নির্জন স্থানে তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ঝোপে ফেলে দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় বলেন এসপি।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা গলা কাটা অবস্থায় তাকে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে আবার জ্ঞান ফিরে এ সময় কাগজে কলম দিয়ে তার শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর লেখেন।এরপর মোবাইলে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়।

শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় আশরাফুলকে ঢাকায় রেফার্ড করেন চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর এই অটোচালকের মৃত্যু হয় বলে জানান এসপি।

শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, দালাল আমির হোসেনের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ির তোফাজ্জলের কাছে অটোরিকশাটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তোফাজ্জল লৌহজংয়ের মসদগায়ের সবুজের কাছে সেটি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে রাতেই সবুজ আবার কাজলের কাছে ৭০ হাজার টাকায় অটোরিকশাটি হস্তান্তর করে।

পুলিশ লৌহজংয়ের কলমা গ্রামের কাজলের বাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। একই সাথে আরেকটি চোরাই অটোরিকশাও কাজলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া কাজলের বিক্রি করে দেওয়া চোরাই আরও একটি অটো টঙ্গীবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বলেও জানিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

নিহতের মামা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকালে আশরাফুলের লাশ শ্রীগরের বাঘড়ার মৃতের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসলে কান্নার রোল পড়ে যায়। আশরাফুলের স্ত্রী রুনা আক্তার ছয় বছরের মেয়ে মরিয়মকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বুধবার এশার নামাজের পর বাঘড়া কবরাস্থানে আশরাফুলকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।