রিফাত হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচারের রায় হবে বুধবার। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
১৫ মাস আগে বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া সেই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জনের বিচার চলে জজ আদালতে। বাকি ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার চলছে বরগুনার শিশু আদালতে আলাদাভাবে।
এ মামলার ১ নম্বর আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩) বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। আর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি (১৯) অভিযোগপত্রের ৭ নম্বর আসামি, যার নাম এ মামলার এজাহারে ছিল এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে।
প্রাপ্তবয়স্ক বাকি আট আসামি হলেন- আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), হাসান (১৯), মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।
এদের মধ্যে মুসা পলাতক, মিন্নি আছেন জামিনে। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
মামলার বাদী রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিন্নিসহ সব আসামির শাস্তি চাই আমরা। দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত রিফাতের খুনের সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দিক যাতে আমরা স্বস্তি পাই।
“অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না—এটাই প্রমাণ হোক। রাষ্ট্র বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক, অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারে না।”
সব আসামির ফাঁসি চেয়েছেন রিফাতের মা ডেইজি আক্তার।
তিনি বলেন, “আমি সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।”
রিফাতরা দুই ভাইবোন ছিলেন। ভাইকে হারিয়ে শোকাহত বোন ইসরাত জাহান মৌ।
তিনি বলেন, “আমরা দুই ভাই-বোন। ভাই ছিল কলিজার টুকরা। ভাই ছিল আমার সাহস ও ভরসা। ভাইকে হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব। ভাইকে তো আর ফিরে পাব না।
“মিন্নিসহ সব খুনির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাব। ভাইয়ার আত্মাও শান্তি পাবে। ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
গত এক বছর ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না বলে জানান রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন।
তিনি বলেন, “চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে রিফাতের মুখ। রিফাতকে নিয়ে আমি বরিশাল পর্যন্ত গেছি। নিস্তেজ শরীরে আমি রিফাতের বেঁচে থাকার আকুতি দেখেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি আইনজীবী আনিসুর রহমান আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
অন্যদিকে নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করছে তার বাবা-মা। মিন্নি অভিযোগপত্রের ৭ নম্বর আসামি, যার নাম এ মামলার এজাহারে ছিল এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে। পরে পুলিশের তদন্তের পর তাকে আসামি করা হয়।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, “আমরা আসলেই হয়রানির শিকার। জীবন বাজি রেখে মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অথচ মিন্নি প্রধান সাক্ষী থেকে এখন আসামির কাঠগড়ায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
“মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে বলে আমরা আশা করি।”
একই প্রত্যাশা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামেরও।
তিনি বলেন, “মিন্নির আইনজীবীরা যে যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করেছেন সেই যুক্তি খণ্ডন করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। মিন্নি যে নির্দোষ এটা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের আইনজীবীরা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মিন্নি এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাবেন।
“মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মিন্নির উপস্থিতিতে কলেজের শহীদ মিনারে হত্যা পরিকল্পনার যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মিন্নি ছিলেন না। আহত রিফাতকে মিন্নি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। কিন্তু সে বিষয়টি পুলিশের অভিযোগপত্রের কোথাও নেই। রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মিন্নির রক্তমাখা জামা-কাপড় পুলিশ নিলেও আদালতে সেই তা উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ বলা হয়েছে, নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মিন্নির জামাকাপড় জব্দ করা হয়েছে এবং এই জব্দ তালিকায় নয়ন বন্ডের মা সাহিদা খাতুনের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্ধার করা জামাকাপড় যে মিন্নির তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়নি। নয়ন বন্ডের মাকে মামলায় সাক্ষীও করা হয়নি।”
আইনজীবী আসলাম আরও বলেন, “যদি কেউ কাউকে খুনের পরিকল্পনা করে তাহলে সে কখনও তাকে বাঁচাতে যায় না। মিন্নি যেভাবে রামদার নিচে গিয়ে তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন এবং পরে রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, এতেই বোঝা যায় মিন্নি নির্দোষ। মিন্নি কোনোভাবেই হত্যায় জড়িত না। আমরা মনে করি, আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাই আশা করছি মিন্নি বেকসুর খালাস পাবেন।”
আরও খবর -