এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা হয়েছিল: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূ ধর্ষণের পর ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ধর্ষকদের বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 11:26 AM
Updated : 29 Sept 2020, 02:28 PM

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা দাবি করেছেন, তার প্রচেষ্টায় সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

গত শুক্রবার রাতে স্বামীর সাথে বেড়াতে আসা নববধূকে তুলে নিয়ে গিয়ে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে দলবেঁধে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ওই দম্পতির টাকা-পয়সা এবং স্বর্ণালঙ্কাও ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর তাদের প্রাইভেটকার আটকে রেখে ওই দম্পতিকে ছেড়ে দেয় ওই যুবকরা।

এ সময় কলেজের ছাত্রবাস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন ধর্ষণের শিকার তরুণীসহ তার স্বামী।

শহরের টিলাগড় পয়েন্টে তাদের কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন ওই এলাকার বাসিন্দা বাবলা, যিনি বাবলা চৌধুরী নামে পরিচিত। তার কাছে ঘটনার বিবরণ দেয় ওই দম্পতি।

তাদের কাছে রোমহর্ষক এ ঘটনার কথা শুনে শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীকে ফোন করেন বাবলা। পুলিশ আসার আগেই ওই দম্পতিকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রাবাসের দিকে রওয়ানা হন তিনি।

সে রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে বাবলা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকমকে বলেন, “প্রথমে ছাত্রাবাসে গিয়ে সাইফুর-রবিউলসহ কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমাকে দেখেই তারা ওই দম্পতির গাড়ির চাবি ও মোবাইল ফোন আমার হাতে তুলে দেয়।

“তারা এগুলো ফেলে গেছে বলে সাইফুর আমাকে জানায়। চাবি আর মোবাইল নিয়ে আমি ছাত্রাবাসের গেইটে এসে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।”

বাবলা চৌধুরী জানান, ছাত্রাবাসের গেইটে এসে তিনি দেখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা এবং যুবলীগের এক নেতাসহ কয়েকজন সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর কিছুক্ষণ পর পুলিশও ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়।

ছাত্রাবাসে প্রবেশের জন্য কলেজ প্রশাসনের অনুমতির পুলিশের বেশ কিছু সময়ক্ষেপণ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ সময় সেখানে উপস্থিত ওই নেতারা প্রথমে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন। তারা আপসের চেষ্টাও চালান। আর এই চেষ্টায় শাহপরান থানার ওসিও তাদের সহায়তা করার উদ্যোগ নেন।

“তবে আমি এরকম আপসের প্রস্তাব মানিনি।”

এসব কথাবার্তায় মধ্যে বেশ কিছু সময় পার হওয়ার সুযোগে ‘অভিযুক্তরা’ ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে মনে করছেন তিনি।

বাবলা চৌধুরী আরও জানান, কলেজের ছাত্রাবাসে প্রবেশের আগেই ধর্ষিতের স্বামীর মোবাইল ফোনে একটি কল আসে।

“আমি তার হাত থেকে ফোন নিয়ে কথা বলি। কলটি করেছিল সাইফুর। ফোনে ওই দম্পতিকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শাসাচ্ছিল সাইফুর। আমি তখন আমার পরিচয় দিয়ে বলি- আমি আসছি, দেখি তোরা কী করতে পারিস।”

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনা আপসে সহায়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহপরান থানার ওসি কাইয়ুম চৌধুরী “ধর্ষণকারীদের পক্ষে কয়েকজন আপসের বিষয়ে ভিকটিমের স্বামীর সাথে কথা বললেও পুলিশ বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।”

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা

সরকার দলীয় কয়েকজন নেতার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশানার জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, “এখন আমরা মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। পরে তদন্তে যদি আর কারও নাম আসে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।”

শুক্রবার রাতের দলবেঁধে ধর্ষণের এ ঘটনায় পরদিন শনিবার সকালে ওই গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর ও বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ। এছাড়া অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও প্রশাসন।

শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এজহারনামীয় ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

ছাত্রাবাসে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করে দিয়েছে হাই কোর্ট। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।