পর্নোগ্রাফির মামলা, বাদীর প্রতীকী নামে ‘প্রথম’ রায়

একান্ত ব্যক্তিগত ছবি সংরক্ষণ এবং প্রচারের অভিযোগে এক মামলায় ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর প্রতীকী নাম ব্যবহার করে রায় দিয়ে অনন্য নজির গড়েছে মাগুরার একটি আদালত।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 10:23 AM
Updated : 29 Sept 2020, 11:39 AM

আইনজীবীরা বলছেন, দেশে কোনো আদালতের রায়ে বিচারপ্রার্থীর প্রতীকী নামের ব্যবহারের ঘটনা এটিই প্রথম।

সোমবার ওই রায়ে আসামি যুবায়ের হোসেনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।

জরিমানার ওই টাকা হয়রানির শিকার তরুণীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

দণ্ডিত যুবায়ের হোসেন মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের পুলুম গ্রামের ইদ্রিস মোল্লার ছেলে।

ব্যক্তিগত ছবি সংরক্ষণ এবং প্রচারের অভিযোগে কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রী ২০১৭ সালে পর্নোগ্রাফি আইনে এ মামলা করেন। রায়ে বিচারক বাদীর পরিচয় দিতে গিয়ে তার প্রতীকী নাম দেন ‘কল্প’।

এ রায়কে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে বর্ণনা করে বাদীপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদা সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের রায়ের কোনো নজির নাই।”

দিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার একটি মামলায় সেই তরুণীর আসল পরিচয় প্রকাশ না করে গণমাধ্যমে তার খবর প্রকাশ করা হয়েছিল নির্ভয়া নামে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও সেই নামই ব্যবহার করা হয়।

আর ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই আসামির প্রকৃত নামের পরিবর্তে ‘এন ওয়ান’ ও ‘এইচ ওয়ান’ নাম দিয়ে রায় দিয়েছিল।

মাগুরার হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান তার রায়ে বাদীর প্রতীকী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওই দুটি দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন বলে জানান আইনজীবী ওয়াজেদা সিদ্দিকী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু বলেন, “ব্রিটেন আইন করে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও ধর্ষণসহ যৌন অপরাধে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

“আমাদের দেশেও 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা কেউ মানছে, কেউ মানছে না। এ অবস্থায় ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ না করে রায় প্রদানের এ ঘটনা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।”

মামলার বিবরণে জানা যায়, জুবায়ের হোসেন ‘কল্প’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে মেয়েটির ব্যক্তিগত কিছু ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে কল্প তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। জুবায়ের তখন ছবিগুলো মুছে ফেলার কথা বলে ফের সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালান। তাতে রাজি না হওয়ায় সেসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন আসামি জুবায়ের। এরপর ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল মামলা করেন কল্প।

মাগুরার হাকিম আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এর আগে তিনটি মাদক মামলার রায়ে প্রচলিত কারাদণ্ডের পরিবর্তে গাছ লাগানো এবং মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ার মতো ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছিলেন।