রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবাওয়াবিদ মোস্তাফিজ জানান, রংপুরে গত ৭৩ বছরে এ ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি; যা এবারে সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙেছে।”
গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে রংপুর শহর।
স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সোমবারও উৎকণ্ঠায় সময় কাটাতে দেকা গেছে।
তাদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় এ ভোগান্তির শিকার তারা। আগাম সতর্ক বার্তা না দেওয়ায় হঠাৎ এ দুর্যোগে পড়েছেন তারা। তাদের খোঁজ না নেওয়ায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
সোমবার সরেজমিনে নগরীর মুলাটোল, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা এলাকা, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, কামার পাড়া, লিচুবাগবন, গুপ্তপাড়া, খলিফাপাড়া, জুম্মা পাড়া, হনুমান তলা, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সর্দারপাড়া, ঈদগাহ পাড়াসহ অনেক এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি দেখতে পাওয়া যায়।
এদিনও পানির নিচে রয়েছে এসব এলাকার রাস্তা, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকার অনেক পরিবার আশপাশের স্কুল-কলেজের উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই চলে গেছেন শুকনো এলাকায় আত্মীয়দের বাড়ি।
স্বেচ্ছাসেবীরা স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে খিচুড়িসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
নগরীর মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী (৫০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাশের স্কুলে রোববার থেকে পরিবার নিয়ে আছি। বাড়ির বিছানার ওপরে এখনো পানি। কেউ কোনো খোঁজও নিচ্ছে না। অসহায় হয়ে এখানে পড়ে রয়েছি।
জুম্মা পাড়া এলাকার জাকির হোসেন (৪০) বলেন, আমি গরিব মানুষ অনেক কষ্ট করে ঘরের আসবাপত্র করে ছিলাম। সেটাও পানিতে ডুবে আছে। আর আমি আছি স্কুল ঘরে বউ-বাচ্চা নিয়ে আছি। আমাদের কেউ একবার খোঁজ খবরও তো নিল না।
লিচু বাগান এলাকার জহির উদ্দিন (৬০) বলেন, বাবা ৮৮ সালে যে বন্যা হয়েছিল তাকেও হার মানিয়েছে এ বৃষ্টি।
তার বাড়িতে রান্না হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রান্না করব কেমন করে? বাড়িতে তো হাঁটু পানি। শুকনো খাবার খেয়ে আছি। কেউ আমাদের কোনো খবর নিল না।”
অন্যদিকে এমন জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরীর শ্যামাসুন্দরী খালের ভরাট হওয়াকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।
রংপুর মহানগরের সুজনের সভাপতি ফখরুল আনাম বেন্জু বলেন, “ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আবর্জনায় ভরে গেছে এসব। ফলে পানি নেমে যেতে পারছে না।
বেগম রোকেয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং রিভার আইন পিপল- এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিষ্কার করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালসহ বিভিন্ন খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে দ্রুত পানি নেমে যাবে। নাহলে আবারও এমন চিত্র দেখতে হতে পারে।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমনার মোস্তফা মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি পরিস্থিতির জন্য উল্টো নগরবাসীকেই দোষারোপ করলেন।
“আমরা পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছি।”
আর বৃষ্টি না হলে মঙ্গলবারের মধ্যে পানি নেমে যাবে বলেও আশা করছেন এই মেয়র।