টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বরিশালে

গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে বরিশাল নগরীর অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী।

কাওছার হোসেন বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2020, 07:00 AM
Updated : 28 Sept 2020, 07:16 AM

জোয়ারের পানি বা ভারি বৃষ্টিপাতে নগরীর গোরস্থান রোড, কলেজ রো, করিম কুটির, পলাশপুর, স্টেডিয়াম কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় পানি নামতেও সময় লাগে ৪ থেকে ৫দিন।

বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা তৈরি হয় নগরীর বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ ‘নবগ্রাম’ সড়কে; এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

ওই এলাকার সফিকুল ইসলাম বলেন, “এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়; ড্রেন ভরে গিয়ে পানি ঢুকে পরে ভবনে। এই পানি নামতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়।

পথচারী ইসরাত জাহান বলেন, “জলাদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়, যানবাহন পাওয়া না গেলে। তখন হাটু পর্যন্ত পানিতে ভিজেই গন্তব্যে যেতে হয়।

এদিয়ে এ ভোগান্তির জন্য খাল ও পুকুর ভরাটকে দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা।

বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন বলেন, নগরীর ও এর আশেপাশে ২৩টি প্রধান ও ২৪টি শাখা সহ ৪৭ খাল ছিল। বর্তমানে ২/৩ ছাড়া বাকিগুলোর অস্তিত্ব নেই।

“খালের বড় অংশ দখল পর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে ভূমিদস্যুরা; আর বাকিটা উন্নয়নের নামে ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করে ধ্বংস করেছে সিটি কর্পোরেশন। ফলে পানি ধারণ ক্ষমতা হারাচ্ছে নগরী, এতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।”

তিনি বলেন, “ঢাকঢোল পিটিয়ে খাল উদ্ধারে নেমেছিল জেলা প্রশাসন; খালের সীমানাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে রহস্যজনক কারণে এখন আবার উদ্ধার অভিযান বন্ধ রয়েছে।”

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধারের বিকল্প নেই বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম।

তিনি বলেন, “কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে সংযোগ প্রতিটি খালের উৎস মুখ ও পতন মুখের পলি অপসারণ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভূমিদস্যুদের জেল-জরিমানার আওতায় আনতে হবে।”

এদিকে খাল দখলদারমুক্ত করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, খাল অবৈধ দখল মুক্ত করা জেলা প্রশাসনের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অভিযান কিছু দিন বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুতই আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।

পুকুর ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাটের ব্যাপারে কঠোর হওয়া বা শতভাগ আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। কারণ ঘর নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন; তাই অনেকে বাধ্য হয়ে পুকুর ভরাট করছে। তারপরেও তাদের বুঝিয়ে পুকুর ভরাট থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, “বরিশাল নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। গত দিনে যারা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে ছিলেন তারা মাস্টার প্লান ছাড়াই ড্রেন নির্মাণ করেছেন; একটি ড্রেনের সাথে অন্যটির সংযোগ নেই। তাই বৃষ্টি বা জোয়ারের পানি নামতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়।”

মেয়র দাবি করেন, নিয়মিত ড্রেন থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। ফলে প্রধান প্রধান সড়কে আগের মত জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে নানা পরিকল্পনার কথা ও এ সময় জানালেন মেয়র সাদিক।

তিনি বলেন, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি খালগুলোতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই খালের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুকুর ও খাল পুর্নখনন করতে হবে।

“এজন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণা লয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।”