সুবিধাভোগী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন সেসব সেবাকাজের নানা বিষয়।
জেলার লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম হায়াতুজ্জামান হায়াত তাদেরই একজন। তিনি লোহাগড়া পৌর এলাকার পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা।
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নড়াইল-২ (লোহাগড়া) আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম অনিক বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রায় ২০০ রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পালস অক্সিমিটার দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করে, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এবং৮৮৭ জন রোগীকে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
“আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য নয়জন টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের সম্মানির ব্যবস্থা করেছি। এ পর্যন্ত ৬৫০০ জন মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী, চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি।”
লোহাগড়া পৌরসভার গোপীনাথপুরের বাসিন্দা কাজী আশরাফও নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার মায়ের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছিলেন বলে জানান।ভ
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তার স্ত্রী আনজুমান আরা বলেন, তার স্বামীর দাফন কাজে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সদস্যরা সব দিক থেকে সহযোগিতা করেছেন।
তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
উপজেলার আমতলা গ্রামের দিদার খানও ফোন করার পর বাড়ি বসেই ত্রাণ পেয়েছিলেন বলে জানান।
নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু বলেন, “করোনাভাইরাসের এই সময়ে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের স্বেচ্ছাসেবকরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন-দাহ করেছেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের পাশে আছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
“একই সঙ্গে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা করে রোগীদের সেবা দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এসব কর্মকাণ্ড সত্যিই নজিরবিহীন।”
লোহাগড়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন ইতিও এই সেবাকাজের প্রশংসা করেছেন।
নড়াইল জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম মুনীর চৌধুরী নড়াইলের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকাকে ‘অতুলনীয়’ মনে করেন।
তিনি বলেন, “ওই সব সংগঠনের জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।”
মানুষ যখন হাসপাতালে আসতে সংকোচ করছিল তখন বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল ক্যাম্প করে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন নড়াইল সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাবু ও নড়াইলের লোহাগড়ার সন্তান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার শুভ্র সৈকত বিশ্বাস।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণকারীদের দাফনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের পাশে আছে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল তাদের সংগঠনটির যাত্রা শুরু। করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের দাফন করতে ভয় পান স্বজনেরা।
“স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা নড়াইল ও পাশের মাগুরা জেলায় এ পর্যন্ত ১৩টা দাফন ও দুইটা দাহ করেছি। নড়াইল সদর হাসপাতালে স্থাপিত ডক্টরস সেফটি চেম্বারে আসা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে সহযোগিতা করছি। হ্যান্ড মাইক দিয়ে হাসপাতালে আসা রোগী ও তার স্বজনদের মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানাই। নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলায় মাস্ক বিতরণ, লকড ডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছি। আমাদের প্রায় চারশত স্বেচছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন।”
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম নড়াইলের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষ করেছে বলে জানান।
তিনি বলেন, “মহামারীর সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেভাবে জনসাধারণ মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা তাদের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে পাশে আছি। আগামীতেও এসব সংগঠন তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে অবগত রয়েছেন জানিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন নড়াইলের ডিসি আনজুমান আরা।
তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন সাধারণ মানুষের পাশে আছে। এ সময়ে নড়াইলের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক ভাল কাজ করছে। আমি তাদের ধন্যবাদ নাচ্ছি। তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তা করার চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, “জেলায় ৪৬৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত। এই সংগঠনগুলো মহামারীর সময়ে তাদের সামর্থ্যমত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে আছে।
“আমাদের কার্যালয়ের নিবন্ধনকৃত ছাড়াও অনেক সংগঠন এ সময় মানুষের পাশে আছে। যেসব সংগঠন আমাদের নিবন্ধনকৃত নয় তাদের আমাদের পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা আগামীতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।”