অন্তত তিন দিক থেকে দীঘিটি দেখার ব্যবস্থা রেখে নগরের প্রাণ কেন্দ্রের এ জলাশয় ঘিরে সিটি সেন্টার, হাঁটাপথ, বসার ব্যবস্থা, উন্মুক্ত জায়গা, মসজিদ, উন্মুক্ত মঞ্চ ও তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে করপোরেশন। রাতের বেলা দীঘি প্রাঙ্গনে থাকবে আলোক সজ্জাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতের আলোক সজ্জায় ফোয়ারার জলধারায় অপরূপ সোনাদীঘি হয়ে উঠবে নগরের আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র।
দর্শনার্থীদের ছাড়াও পুরো বাজার এলাকার ব্যবসায়ীরাও এর সুফল পাবেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সোনাদীঘি মসজিদকে সিটি সেন্টারের স্থানান্তর করা হয়েছে। মসজিদ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সোনাদীঘিকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। বৈধ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এরপর শুরু হয় অপরিকল্পিত পুরোনো স্থাপনা ভাঙার কাজ।
তবে ১৯৮০ সালের দিক থেকে দীঘির চারপাশে নানা স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। অপরিকল্পিত এসব স্থাপনায় আড়ালে পড়ে যায় এ দীঘি। তখন থেকে রাস্তা থেকে আর সোনাদীঘি দেখা যেত না। হারাতে বসে এর ঐতিহ্য।
আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়ে সোনাদীঘি রক্ষায় উদ্যোগ নেন।
তবে ২০১৩ সালে বিএনপি নেতার কাছে মেয়র নির্বাচনে হেরে গেলে সোনাদীঘি উদ্ধারে তার নেওয়া প্রকল্পটি থমকে যায়।
খায়রুজ্জামান লিটন ফের মেয়রের দায়িত্ব পেয়ে এ দীঘির সুরক্ষা প্রকল্পটিকে নবজীবন দেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ-রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, শত বছর আগে সুপেয় পানির জন্য খনন করা হয় সোনাদীঘি।
“এক সময় সোনাদীঘি ছিল অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রও। তখন সোনাদীঘির চারপাশ উন্মুক্ত ছিল। এর পানি এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে তা দিয়ে এলাকাবাসীর রান্নার কাজও চলত।”
রাজশাহী পৌরসভার কর্মীরা কেউ দীঘিতে যেন ময়লা না ফেলে তা তদারকি করতেন।
পদ্মার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত এ দীঘিতে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি ঢুকত। নদীর ঘোলা পানি থিতিয়ে গেলে আবার দেখা মিলত স্বচ্ছ পানির বলেন তিনি।
“সোনাদীঘিকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে। দীঘিকে সংস্কার করে স্বচ্ছ পানির ব্যবস্থা করা হবে। কাজ শেষে সোনাদীঘি ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য ও নিজস্ব স্বকীয়তা।”
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সোনাদীঘির হারানোর ঐতিহ্য ফিরে আনতে ২০০৯ সালে প্রথম উদ্যোগ নেন এই মেয়র।
সে সময় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ‘এনা প্রপার্টিজ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের সাথে ১৬ তলা ‘সিটি সেন্টার’ নির্মাণ ও সোনাদীঘিকে সাজানোর চুক্তি করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
২০১৩ সাল পর্যন্ত এর কাজ কিছুটা এগোলেও পরবর্তী পাঁচ বছর কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান ১৯৭৫ সালে কারাগারে কতিপয় সেনার হাতে নির্মম হত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার একজন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে লিটন।
আশা করা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে সোনাদীঘি ঘিরে যাবতীয় সাজগোজ।