যমুনা চরের শেষ ভরসা গাইন্জা ধান ডুবে গেছে

হঠাৎ যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বগুড়ার চরবাসীর শেষ ভরসা স্থানীয় জাতের গাইন্জা ধানও তলিয়ে গেছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 04:22 PM
Updated : 21 Sept 2020, 04:22 PM

বন্যায় আমন চাষ করতে না পারলে এ জেলার চরের চাষির শেষ অবলম্বন গাইন্জা ধান। চরের পলি মাটিতে রাসায়নিক সার ছাড়াই কম খরচে উৎপন্ন হয়। চিকন, সুস্বাদু  এ ধানের দাম বেশি পায় বলে চাষও করে কৃষকরা।

ধানও বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে চরের চাষিরা।

সোনাতলা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন, সরিয়াকানৃদী উপজেলার চারটিসহ আংশিক চারটি ইউনিয়ন এবং ধুনট উপজেলার একটি ইউনিয়ন যমুনার চর কৃষি বিভাগের তথ্য।

সরেজমিনে সারিয়াকান্দী উপজেলার দুর্গম চর আওলাকান্দী, বোহাইল, কর্নীবাড়ী ঘুরে জানা যায়, দুই দফা বন্যায় রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পর চরের চাষিরা গাইন্জা ধান রোপন করেছিল। কিন্তু গত পাঁচ দিন ধরে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সব তলিয়ে গেছে।

এ পানি বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, যমুনার পানি কয়েক দিনে পর্যায়ক্রমে বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন কমতে শুরু করেছে।

“বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”

এদিকে, ধুনটের বানিয়াজান গ্রামের ভুলু মন্ডল জানান, যমুনার পানি কমতে কমলেও পানি জমি থেকে নামতে দেরি হয়। এরই মধ্যে বেশির ভাগ গাইন্জার আবাদ নষ্ট হয়ে যাবে।

আওলাকান্দী চরের নুরুল ইসলাম জানান, এমনিতে চরের কৃষক গাইন্জা ধান চাষ করে বেশি। এছাড়াও রোপা আমনও চাষ করে থাকে। বন্যায় রোপা আমন নষ্ট হলেও শেষ সময়ে গাইন্জা ধান চাষ করা যায়।

“এবার দফায় দফা বন্যায় রোপা আমন নষ্ট হয়ে যায়। শেষ ভরসা গাইন্জা ধানের চাষ করা হয়। হঠাৎ আরেক দফা বন্যায় গাইন্জাও ডুবে গেছে।

১০ বিঘা জমির ধান ডুবে যাওয়া এ কৃষক বলেন, “দ্রুত পানি নেমে না গেল ধান আর হবে না।”

বোহাইল চরের ইসাহাক আলী জানান, তারও চার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে।

“বন্যার পানি কমতে দেরি হলে নুতন করে গাইন্জা ধান লাগানোর সময়ও থাকবে না। আর সময় পাওয়া গেলেও চারা জোগাড়ে সংকট হবে।”

এবার বগুড়ায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে। অবশ্য স্থানীয় গাইন্জা ধানে কোনো লক্ষ্যমাত্রা সরকারি কৃষি অফিসের নাই।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাইন্জা লাগানো সময় রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে পানি কমে গেলে কৃষকরা গাইন্জা চাষ করতে পারবে।

জেলার সোনাতলা, ধুনট চাইতে সারিয়াকান্দী উপজেলায় যমুনার চর বেশি।

সারিয়াকান্দী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি। চার তিন দফা বন্যায় রোপা নষ্ট হয়ে যায়।

“চরের কৃষক বন্যার কারণে রোপার চেয়ে গাইন্জা চাষের প্রস্তুতি রাখে বেশি। বন্যার কারণে দুই-তিন বারের টার্গেট রাখে।

বন্যায় ধান গাছ নষ্ট হলেও পানি কমায় তার আশা শেষ সময়ে কৃষকরা ফের এ ধান লাগাতে পারবে।