শার্শায় আর্সেনিকমুক্ত পানি পাচ্ছে ২ হাজার পরিবার

যশোরের শার্শা উপজেলা সদর ইউনিয়নে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির সাপ্লাই পেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2020, 05:38 AM
Updated : 16 Sept 2020, 05:38 AM

মূলত শার্শা ইউনিয়নের নাভারন বাজারের দুই হাজার পরিবারের বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এ পানি।

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, “পানি নিরাপদ না হলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না। তাই নিরাপদ পানি পানের সুযোগ তৈরি করা, গুণগতমান, সবার জন্য সহজলভ্য ও টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। 

"টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে বহুমুখী পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামাঞ্চলের পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারে ইউনিসেফ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।"

তিনি বলেন, “শার্শা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। এক লাখ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন ট্রাংকটিতে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। এই পানি আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত।”

শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহারব হোসেন বলেন, “আমার এলাকায় আর্সেনিক দূষিত এলাকা হওয়ায়, সাধারণ মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি পেতে পারে সেজন্যই সরকারিভাবে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

“বিভাগীয় শহর বা মহানগরীর মানুষের কাছে সাপ্লাই পানি সম্পর্কে একটা ধারণা থাকলেও মফস্বল এলাকায় এই ধারণা একবাইরেই ছিল না। ফলে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কিছুটা অসুবিধা হলেও এখন মানুষ সচেতন হয়েছে; সুফল পেতে শুরু করেছে। চাহিদাও বেড়েছে।”

শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় দুটি ধাপে মাসিক ১৫০ অথবা ১৯০ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবারকে এই পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ টাকা দিয়েই প্রকল্পের সকল ব্যায় মেটানো ও তদারককারিদের বেতনভাতা দেওয়া হয় বলে জানান সোহারব।

তিনি বলেন, শার্শা সদর ইউনিয়নের মোট জনসংখ্য ৩৮ হাজার সাপ্লাই পানি বাদেও অন্যান্য এলাকায় বিশুদ্ধ আর্সেনিক ও আয়রন মুক্ত পানির ব্যবস্থা করতে ২০০টি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এর বাইরে ইউনিয়নের ৫৫টি মসজিদ ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিশুদ্ধ পানির জন্য আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।”

এদিকে শার্শূা ইউনিয়নের কজিরবেড় গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,  লিটন হোসেন, সাইফুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, টুটুল হোসেন, মিজানুর রহমানের মত অন্তত ১৫০পরিবার এই বিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করছেন।

ওই গ্রামের সেলিম রেজা বলেন, “দিন দুইবার লাইনে পানি আসে। সকাল ৭টায় একবার, দুপুর ২টায় আসে দ্বিতীয়বার। এতেই আমাদের চাহিদা মিটে যায়। অধিকাংশ গ্রাহক চাহিদা মোতাবেক পানি সংরক্ষণ করে রাখে ।“

যাদবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর তরফদার আজাদ বলেন, “এই এলাকার মানুষের সুপেয় নিরাপদ পানির খুব অভাব ছিল। এখন আমরা খুব ভাল আছি। আর্সেনিক ও আয়রণমুক্ত পানি পাচ্ছি। মফস্বলে থেকেও শহরের স্বাদ পাচ্ছি।“

বুরুজবাগানের গৃহবধু রেবেকা পারভীন বলেন, “আগে আমরা সাধারণ টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতাম। ঘরের মেঝের টাইলস, বেসিন, বাথরুম, হাড়িপাতিল সব আয়রনের জন্নি লাল হয়ে যেতো। সাপ্লাই পানি ব্যবহারের পর থেকে আর লাল হয় না।রান্নাবান্নার কাজেও এই পানি ব্যবহার করছি।এখন আমরা খুব ভাল আছি ।”

নাভারন ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের অধ্যাপক বখতিয়ার খলজি মন্টু বলেন,

“সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের নিরাপদ পানি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে ।”