মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা ও যশোর জেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার খবরও পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, যশোর, গাজীপুর ও জামালপুরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে
গাজীপুরে ৮ দোকান মালিককে জরিমানা
জরিমানা দিয়েছেন, কাপাসিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আ. রহিম, মাসুম মিয়া, নাজমুল হক, সিরাজুল ইসলাম, প্রলয় কুমার ও আমজাত আলী।
এছাড়া কালীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আজগর আলী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে জরিমানা মেটাতে হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা বলেন, “অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ পেয়ে কাপাসিয়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
“এ সময় দেখা যায় সোমবার যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৩ টাকা মূল্যে বিক্রি হতো, পরদিন মঙ্গলবার সেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮৫ টাকা দামে বিক্রি করছে।”
অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগে কাপাসিয়া বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯' আইন অনুযায়ী ছয় দোকানের মালিককে মোট ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলেন তিনি।
কাপাসিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আ. রহিমকে ৫ হাজার টাকা, মাসুম মিয়াকে ৫ হাজার টাকা, নাজমুল হক ও সিরাজুল ইসলামকে দুই হাজার টাকা করে এবং প্রলয় কুমার ও আমজাত আলীকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
এদিকে, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবলী সাদিক জানান, একই অভিযোগে 'কালীগঞ্জ বাজারে অভিযান পরিচালনা করে 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯' আইন অনুযায়ী দুই দোকান মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
“তারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করছিল।”
গত সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়।… এর পরে বসবে নিচের অংশটুকু। তারপর গাইবান্ধায় ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা আগের মতোই থাকবে।
জামালপুরে দুই ব্যবসায়ীকে ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা
অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বেচার অবিযোগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌর বাজারের দুই ব্যবসায়ীকে ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দুপুরে দেওয়ানগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এ অভিযান পরিচালনা করেন।
শরিফা ট্রেডার্সকে ৩০ হাজার টাকা এবং আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করে।
দেওয়ানগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেওয়ানগঞ্জ পৌর বাজারে অভিযান পরিচালনা করে।
এ সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ টাকা দামে বিক্রি করার অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০১৯ ধারা ৩৮ অনুযায়ী শরিফা ট্রেডার্সকে ৩০ হাজার টাকা এবং আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যবসায়ীকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান বলেন, দেওয়ানগঞ্জে পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গাইবান্ধায় ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করে এ জরিমানা আদায় করেন গাইবান্ধা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুস ছালাম।
গাইবান্ধা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুস ছালাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবর শুনে গাইবান্ধার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
“আর তাই গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জনস্বার্থে র্যাবের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।“
তিনি জানান, দেশি পেঁয়াজ ৫৮ টাকা কেজি দরে কিনে ৮০ টাকায় এবং ভারতের পেঁয়াজ ৪৬ টাকায় কিনে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন গাইবান্ধা পুরাতন বাজার ও সাদুল্লাপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা।
“প্রথমে অভিযান পরিচালনা করা হয় জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজারের আড়ৎ পুরাতন বাজারে। এখানে চার ব্যবসায়ীকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে একজনকে ১০ হাজার টাকা, দুইজনকে পাঁচ হাজার টাকা করে এবং আরেক জনকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এরপর অভিযান পরিচালনা করা হয় জেলা শহরের কাঁচাবাজারের আড়ৎ নতুন বাজারে। এখানেও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শেষে অভিযান পরিচালনা করা হয় সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরের প্রধান কাঁচাবাজারের আড়ৎ সাদুল্লাপুর বাজারে। এখানে অভিযান পরিচালনা করে একজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা দুই হাজার টাকা করা হয়।
বেনাপোলে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়
দুপুরে শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলক কুমার মন্ডল ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হিসেবে এ তিনজনের থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করেন।
এ তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, মিম বাণিজ্য ভান্ডার, মেহেরাব স্টোর এবং বাণিজ্য ভান্ডার।
ইউএনও পুলক কুমার মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় বেনাপোল বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, এমন অভিযোগ পেয়ে বেনাপোল বাজারে পরিদর্শনে গেলে এর সত্যতা মেলে।”
দ্রব্যমূল্যের তালিকা না পাওয়া এবং বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অভিযোগে
'মিম বাণিজ্য ভান্ডারকে' ১০ হাজার টাকা, 'মেহেরাব স্টোরকে' ১৫ হাজার টাকা এবং 'বাণিজ্য ভান্ডারকে' ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে সতর্কও করা হয়েছে বলেন তিনি।
তিনি জানান, উপজেলার প্রতিটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানকে পেঁয়াজের দাম স্থিতি রাখতে বাজার মনিটরিং-এর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে দুই আড়তে জরিমানা
দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহরের প্রধান বাজারে অভিযান চালিয়ে এ দুই আড়তদারকে এ সাজা দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু ওয়াদুদ।
জরিমানা দিয়েছেন, রিহান ট্রেডার্স’র মোহাম্মদ সুজন এবং কবির ট্রেডার্স’র এমরান হোসেন।
লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু ওয়াদুদ জানান, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা এবং পেঁয়াজ ক্রয়ের ইনভয়েস দেখাতে না পারায় এ দুই আড়তকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, লক্ষ্মীপুর শহরের প্রধান বাজার পরিদর্শনকালে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তবে তারা পেঁয়াজ কেনার ইনভয়েস চাইলে দেখাতে পারেনি। তাই রিহান ট্রেডার্সের মোহাম্মদ সুজনকে চার হাজার টাকা এবং কবির ট্রেডার্সের এমরান হোসেনকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে এ জেলায় পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি করছে ৬৫ টাকা। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ওয়াদুদ।
দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু ওয়াদুদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (সাধারণ) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার সুমী।
গত সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর কাঁটা টুকরা ও গুঁড়া ছাড়া সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তাদের এক নোটিফিকেশনে বলা হয়।
এ ঘোষণার পর সীমান্তে বাংলাদেশ অভিমুখী পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলারের এলসির এই পেঁয়াজ এখন বর্ধিত মূল্য ৭৫০ ডলারে এলসি করলেই সেগুলো ছাড়া হবে।
অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং মজুদে ঘাটতির কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরেও পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি করে এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। সে সময় বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। সে সময় ক্রেতাদের ২৫০-৩০০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছিল।
পরে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর গত মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ রপ্তানিও করে ভারত।