শরীয়তপুরে আ.লীগের দু‘পক্ষের সংঘর্ষে ব্যাপক বোমাবাজি, আহত ২৫

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2020, 03:35 PM
Updated : 14 Sept 2020, 03:35 PM

সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বুধাইর হাট এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এ সংঘর্ষের আগের রাতেও এক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, হারুন খলিফা (৬৫) এ ইউনিয়নের বায়মদ্দিকান্দি গ্রামে সিরাজ খলিপার ছেলে এবং কাদির মাদবর (৪৫) ইয়াসিন মাতবরকান্দি গ্রামের আবদুল রহমান মাতবরের ছেলে।

আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জাজিরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, বিলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ বেপারীর সমথকদের মধ্যে রবি ও সোমবার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কিছু হাত বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছে।

“খবর পেয়ে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। এখনও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) এসএম মিজানুর রহমান জানান, বিলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ বেপারীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতবোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

“ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ২১টি তাজা বোমা উদ্ধারসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এ ঘটনায় জাজিরা থানার এসআই মফিজুর রহমান বাদী হয়ে ১১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দুই পক্ষের প্রধান নেতা বিলাশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং বিলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার সংঘর্ষের জন্য নিজেদের দায় এড়িয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদারের প্রায় শতাধিক লোক আমার বাড়ি এবং আমার সমর্থকদের উপর শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ১০ বাড়ি ভাংচুর করে। তারা বাধা দিলে আমার ১০ জন সমর্থককে বোমা মেরে আহত করে।

অপর দিকে, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু তাহের সরদার বলেন, স্থানীয় জলিল মাদবরের সমর্থক ও সাবেক চেয়ারম্যনের সমর্থকদের মধ্যে ঝগড়া হওয়ার কথা শুনেছি।

“আমি ঢাকাতে আছি। এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না।”

ঘটনার বিবরণ দিয়ে জাজিরা থানার জাজিরা থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন জানান, গত রোববার রাতে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের কাছে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

এতে সোলায়মান বেপারী (২০), লিটন সরদার (২২), আতাউর রহমান (২৬), মজিবুর রহমান (৩৪) সাকিল সরদার (২৫), আরিফ সরদার সহ প্রায় ১৫ জন গুরুতর আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা কামাল বেপারী, আমজাত হোসেন সরদার, জলিল ফকিররের ঘরসহ পাঁচটি ঘর ভাংচুর করে বলেও জানান তিনি।

এরপর সোমবার সকাল ৮টায় বুধাইর হাট এলাকায় আবার সংঘর্ষ বাধে।

এ সংঘর্ষে বোমা ও ইটের আঘাতে মন্তা বেপারী (৪৫), রাব্বি মিয়া (২৫), আব্দুল মান্নান মেম্বার (৫০), সোহান বেপারী (৩২) তোতা খান (৫০), তমিজ খান (৪০), তোতা বেপারী, আলি আজম সরদারসহ ১০ জন মারাত্মক আহত হন। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

“তাদের মধ্যে মন্তা বেপারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

আহত মন্তা বেপারীর স্ত্রী পাভিন আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে তাহের সরদারের লোকজন ধাওয়া করে। তখন সে ঘরে আশ্রয় নেয়।

“সন্ত্রাসীরা ঘরে ভেতর বোমা মেরে তাকে মারাত্মক আহত করে। সে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে গুরতর আহত অবস্থা রয়েছে।”

সংঘর্ষের পর আতঙ্কে বুধাইরহাট বাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান পাট বন্ধ রাখে।

স্থানীয় লাল মিয়া বেপারী, হাসেম সরদার ও কামাল বেপারী, আহম্মদ সরদার ও দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বিলাশপুর ইউনিয়নে ২৫ থেকে ৩০ বার বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন। তাদের অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন।