ইউএনওর উপর হামলায় রবিউলকে ফাঁসানো হচ্ছে, দাবি এলাকাবাসীর

র‌্যাবের বক্তব্য উল্টে দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলাকারী হিসেবে যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ, সেই রবিউল ইসলামকে ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে’ বলে দাবি করছেন তার এলাকার বাসিন্দারা।

দিনাজপুর প্রতিনিধিমোর্শেদুর রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2020, 06:24 PM
Updated : 13 Sept 2020, 06:26 PM

তারা বলছেন, যে রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ওয়াহিদা খানমের বাড়িতে ঢুকে তার উপর হামলা হয়, সেই রাতে রবিউল বিরল উপজেলায় তার নিজের বাড়িতেই ছিলেন।

রবিউল ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন দাবি করে এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন।

রবিউল ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদে মালির পদে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বরখাস্ত হন। তার বাড়ি ঘোড়াঘাটের ১০০ কিলোমিটার দূরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢুকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর উপর হামলা চালানো হয়। মাথায় হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত ওয়াহিদা এখন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোলের মধ্যে দুদিন পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ঘটনাটি চুরির ঘটনা।

র‌্যাবের ভাষ্যে, আসাদুল হক (৩৫) নামে যুবলীগের এক কর্মী চুরি করতে ঢুকে ইউএনওকে আঘাত করেছিলেন। তার সহযোগী ছিল নবীরুল ইসলাম (৩৪) ও সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮) নামে অন্য দুজন।

আসাদুল এই হামলায় তার ‘সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার’ করেছেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।

তবে এই ঘটনা নিছক চুরির ঘটনা হিসেবে মানতে আপত্তি জানায় সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির নেতারা দাবি করেন, ওয়াহিদার উপর হামলা পরিকল্পিত।

এরপর শনিবার রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য দিনাজপুরে সংবাদ সম্মেলন করে রবিউলকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়ে বলেন, হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। রবিউলও হামলায় জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছেন’।

শনিবার দুপুরে বিরলের ভীমপুর গ্রামে সাংবাদিকরা গেলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে রবিউলের পক্ষে বলতে থাকেন। তার বাড়িতেও ভিড়।

প্রতিবেশী মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২ সেপ্টেম্বর রাতে রবিউলসহ তারা এক সঙ্গে এশার নামাজ পড়েছেন এবং পরদিন সকালে জমিতে কাজও করেছেন।

তার কথায় সমর্থন দেন অন্যরাও।

রওশন আরা নামে এক প্রতিবেশীও বলেন, তিনি রবিউলকে ২ সেপ্টেম্বর বিকালে শহর থেকে বাড়িতে আসতে এবং পরদিন সকালে ধানক্ষেতে যেতে দেখেছেন।

রবিউল এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, সে কথা গ্রামের অন্যরাও বিশ্বাস করতে চাইছেন না।

এ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করে বিজোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে।
“প্রায় ৩৬ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালনে রবিউলের পরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ পাইনি।”

তবে রবিউলের চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়ে তারা কিছু বলেননি।

ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ একজন কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার বলেছিলেন, টাকা চুরির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রবিউলের ভাই মহসীন জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ডিবি পুলিশ রবিউলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন তাকেসহ রবিউলের স্ত্রী শাবনাজ ও মা রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়।

ডিবি পুলিশ তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন রবিউলের ভাই।

রবিউলের পরিবারসহ এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবির ওসি ইমাম জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা মৌখিকভাবে বলতেই পারে।

“তবে রবিউল যে এ ঘটনায় জড়িত এবং ঘটনার দিন সেখানে ছিল, তার স্বাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।”

রবিউলকে ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতের মাধ্যমে হেফাজতে নিয়ে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।

তবে রবিউল কেন হামলা করেছিলেন, তা এখনও খোলসা করেনি পুলিশ।

পুরনো খবর