ব্রি আনল আরো তিন জাতের ধান

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত আরো তিন জাতের ধানের অনুমোদন দিয়ে সরকার।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 07:52 PM
Updated : 8 Sept 2020, 08:33 PM

মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় এসব ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ জাতগুলো হচ্ছে ব্রি ধান ৯৭, ব্রি ধান ৯৮ ও ব্রি ধান ৯৯।

এর মধ্যে দুই বোরো মওসুমের লবণাক্ততা সহনশীল জাত এবং অপরটি আউশ মওসুমে চাষাবাদের উপযোগী

এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের মোট জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৫টি।

ব্রি ধান ৯৮

ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, নতুন জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান ৯৮ আউশ মওসুমে চাষ উপযোগী জাত। এর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫.০৯ থেকে ৫.৮৭। এর দানা লম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের দানার রং সোনালী। এ জাতের জীবনকাল ১১২ দিন যা  রোপা আউশ মওসুমের জাত বিআর ২৬ এর সমান।

তিনি জানান, এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৬ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.৯ ভাগ এবং  প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।

এ জাতের কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছরের ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০১৮-১৯ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বলে জানান তিনি।

উক্ত কৌলিক সারিটির জীবনকাল বিআর২৬ এর মতো এবং ফলন বেশী হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল আউশ ২০১৯-২০ মওসুমের কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় আউশ মওসুমের জন্য বিআর২৬ এর একটি পরিপূরক জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।  

ব্রি ধান ৯৭

শাহজাহান কবীর জানান, ব্রি ধান ৯৭ ও ব্রি ধান ৯৯ বোরো মওসুমের উচ্চ ফলনশীল লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত। এ জাতগুলো লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।

ব্রি ধান ৯৭ এর গড় জীবনকাল ১৫২ দিন এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৯ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে বলেন তিনি।

এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৫.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৬ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল মাঝারি মোটা হওয়ায় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হবে বলে আশা তার।

ব্রি ধান ৯৯

তিনি জানান, ব্রি ধান ৯৯ এর গড় জীবনকাল ১৫৫ দিন এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৫.৪ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭.১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৮ গ্রাম।

ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭.৯ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ৯৪ সেন্টিমিটারমি ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলছেন তিনি।

এ জাতের কৌলিক সারিগুলো নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিগুলোর বোরো ২০১৭-১৮ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কৌলিক সারিগুলো লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান ৬৭-এর থেকে ফলন বেশি হওয়ায় এ ধানের নতুন জাত হিসেবে নির্বাচিত হয় বলেন তিনি।

এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০১৮-১৯ মওসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বোরো মওসুমের জন্য লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান ৬৭ এর পরিপূরক জাত হিসাবে এ জাত দুইটি অবমুক্ত করা হয় জানান তিনি।

জাতীয় বীজ বোর্ডের এ সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্ব করেন। সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।