নীলফামারীতে শিশু জিহাদকে খুনে ‘বাবা- মা ও নানা’

নীলফামারীতে বালিশে শ্বাসরোধ করে, গরম পানিতে শরীর ঝলসে শিশু জিহাদকে হত্যায় তার বাবা জড়িত বলছে পিবিআই; এই হত্যায় তার সঙ্গী ছিলেন তার অপর স্ত্রী ও শ্বশুর।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 05:46 PM
Updated : 8 Sept 2020, 05:47 PM

হত্যাকাণ্ডের ৫৪ দিন পর মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন।

গত ১৬ জুলাই মধ্যরাতে ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের রামডাঙ্গা ফরেস্ট সংলগ্ন শিংহারা নদীর পাড়ের রাস্তায় তালাবদ্ধ ট্রাংক থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তবে তখন লাশের পরিচয় পায়নি তারা।

নিহত ১২ বছরের শিশু জিহাদ দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলা শহরের জিয়াউর রহমানের ছেলে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, নিহতের বাবা জিয়াউর রহমান (৩৫), সৎ মা আলেয়া মনি (১৯), সৎ নানা আইয়ুব আলী (৫৫), মরদেহ বহনে ব্যবহৃত পিকআপের মালিক ও চালক ইসমাইল হোসেন (২৬)।      

ঘটনার বিবরণে পিবিআইর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ জুলাই রাতে শিশু জিহাদকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার বাবা, সৎ মা এবং সৎ নানা। পর গরম পানি ঢেলে শরীর ঝলসে দিয়ে বাক্সবন্দি করে পিকআপে করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডোমার-ডিমলা সড়কে বালাপাড়া ইউনিয়নের রামডাঙ্গা ফরেস্ট এলাকায় ফেলে রেখে পালি যায় তারা। 

বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার জাকির জানান, এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা জিয়াউর রহমান, তার সৎ মা আলেয়া মনি, সৎ নানা আইয়ুব আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া ওই মরদেহ বহনকারী পিকআপটি আটক করে মালিক ও চালক ইসমাইল হোসেনকেও (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, শিশু জিহাদের সঙ্গে সৎ মা আলেয়া মনি এবং তার বাবা জিয়াউর রহমানের বনিবনা না হওয়ায় তারা একত্রে পরিকল্পিতভাবে গত ১৪ জুলাই রাতে ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গরম পানি ঢেলে শরীর ঝলসে দেয়।

পরদিন ১৫ জুলাই সকালে হত্যার ঘটনা গোপন করতে তার বাসায় ব্যবহৃত একটি স্টিলের ট্র্যাংকে বাবা জিয়াউর রহমান, সৎ মা আলেয়া মনি ও নানা আইয়ুব আলী একটি বিছানার চাদর ও কাঁথা দিয়ে শিশু জিহাদের মরদেহ পেচিয়ে ট্রাংকের ভেতরে ঢোকায়। আইয়ুব আলী পার্শ্ববর্তী মীম ভ্যারাইটিজ স্টোর থেকে দুইটি চাইনিজ তালা কিনে এনে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে।এরপর রাতে মরদেহ ভর্তি ট্রাংকটি অপসারণের জন্য বিরল হাসপাতালের গেটের সামনে থেকে একটি নীল রঙের ছোট পিকআপ ভ্যান ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ওই স্থানে ফেলে আসে তারা বলে জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, গত সোমবার রাতে বিরল উপজেলা শহরের ভাড়া বাসার তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে শিশু জিহাদের বাবা, সৎ মা এবং দাদাকে গ্রেপ্তার করা হয়।এ সময় ওই ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়। জিহাদকে হত্যার পর যা দিয়ে পানি গরম করে মৃতদেহে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিটি হাতে পাওয়ার পর মোবাইল ফোনে হত্যার রহস্য উদঘাটনের কথা স্বীকার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ধৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই’র কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে পাঠানো হচ্ছে।”

ডিমলা থানা পুলিশের পরির্দশক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৬ জুলাই মধ্যরাতে ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের রামডাঙ্গা ফরেস্ট সংলগ্ন শিংহারা নদীর পাড়ে রাস্তায় একটি তালা দেওয়া ট্রাংক দেখতে পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাতেই ডিমলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাংকটি পাহারায় রাখে।

“ট্রাংকটিতে তালা থাকায় বিস্ফোরক থাকতে পারে সন্দেহে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এবং গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) খবর দিয়ে সারারাত পুলিশ পাহারা রাখা হয়।”

১৬ জুলাই দুপুরে নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানের উপস্থিতিতে সিআইডির বোমা নিষ্ক্রীয়করণ ইউনিট সদস্য, পিবিআই, ডিবি ও ডিমলা থানা পুলিশের সহায়তায় ট্রাংকটির তালা খোলা হলে কম্বল মোড়ানো অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

“মরদেহের সঙ্গে ট্রাংকের ভেতর ২০১৯ সালের একটি চিকিৎসাপত্র পাওয়া যায়।যেখানে জিয়াউর রহমান, ঠিকানা দিনাজপুর লেখা পাওয়া যায়।”

এ ঘটনায় ডিমলা থানা পুলিশ একটি মামলা করলে মরদেহের পরিচয়সহ রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে ডিমলা থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে ২০ জুলাই মামলাটির তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুর গ্রহণ করে।