এবার ‘সাংবাদিক নির্যাতনের’ অভিযোগে ‘ওসি’ প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা

‘সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক নির্যাতনের’ অভিযোগে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 02:21 PM
Updated : 8 Sept 2020, 02:21 PM

মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর-৪ এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ’র আদালতে সদ্য জামিনপ্রাপ্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ ইমরুল।

ফরিদুল মোস্তফা খান (৩৮) অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘জনতার বাণী ডটকম’ এবং ‘দৈনিক কক্সবাজার বাণীর’ সম্পাদক ও প্রকাশক।

এ মামলায় ৩০ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৬ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। বাকি চারজন টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা।

মামলার আসামি অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন, এসআই মো. কামরুজ্জামান, পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা, পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান, এসআই প্রদীপ, এসআই মো. সাইফুল করিম, এসআই মশিউর রহমান, এসআই মনছুর মিয়া, এসআই ছাব্বির আহমদ, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এসআই মো. বাবুল, এসআই মো. জামাল উল্লাহ, এসআই মো. নাজির উদ্দিন, এসআই আমির হোসেন, এসআই মিশকাত উদ্দিন, এসআই সঞ্জিত দত্ত, কনস্টেবল নাজমুল হাসান, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম, কনস্টেবল হেলাল উদ্দিন, কনস্টেবল মংচিং প্রু চাকমা, কনস্টেবল আবদুল শুক্কুর, কনস্টেবল হেলাল উদ্দিন, কনস্টেবল মো. মহি উদ্দিন ও কনস্টেবল সেকান্দর।

এছাড়া টেকনাফে স্থানীয় বাসিন্দা সামীরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলেরডেইল এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ার হাজী আবুল কাশেমের ছেলে মফিজ আহমদ, হ্নীলা ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার তাজর মুল্লুকের ছেলে আবুল কালাম ওরফে আলম এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্জর পাড়ার মৌং সিরাজুল হকের ছেলে নুরুল আমিন।

এর আগে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিভিন্ন জনকে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে আদালতে ১০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অন্তত দেড়শ’ জনকে। যাদের অধিকাংশই পুলিশ সদস্য।

মামলার এজাহারের বরাতে বাদীর আইনজীবী ইমরুল বলেন, ওসি প্রদীপের হত্যা বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে লাভজনক কাজে লিপ্ত থাকা নিয়ে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টেকনাফে আইন-শৃংখলার অবনতি: টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ’ শিরোনামে তার কর্মরত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে ওসি প্রদীপসহ অন্য আসামিরা এ মামলার বাদী ফরিদুলের উপর খেপে যান।

“এ নিয়ে পুলিশের হুমকি ও হয়রানির মুখে আতঙ্কিত হয়ে ফরিদুল মোস্তফা খান পরিবার নিয়ে ঢাকায় আত্মগোপন করেন। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানার পুলিশ ঢাকা থেকে তাকে আটক করে কক্সবাজার নিয়ে আসে।”

বাদীর আইনজীবী জানান, পুলিশ আইন লংঘন করে ‘ফরিদুলকে নিকটস্থ থানায় বা বিচারকের কাছে হস্তান্তর না করে ধারাবাহিক হত্যার চেষ্টা ও অমানবিক নির্যাতন চালায়।’ ২২ সেপ্টেম্বর রাতে তার কক্সবাজার শহরের বাসায় অভিযানের নাটক সাজিয়ে চার হাজার ইয়াবা, দুইটি দেশি বন্দুক, পাঁচটি গুলি ও ১২টি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার দেখিয়ে তিনটি মামলা করে।

এসব মামলায় ফরিদুল মোস্তফা খান দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ২৭ অগাস্ট কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন বলে জানান আইনজীবী ইমরুল।

বাদীর এ আইনজীবী বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুরোকে (পিআইবি) আদেশ দিয়েছে। এছাড়া মামলার পরবর্তী নির্ধারিত তারিখ ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যও আদেশ দিয়েছে আদালত।