মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ‘ভুয়া সনদে’ আবেদন জয়পুরহাটের মহিলা আওয়ামী লীগ নেতার

বীরাঙ্গনা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ‘ভুয়া কাগজপত্র’ দিয়ে আবেদন করার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছমা বিবির বিরুদ্ধে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 09:06 AM
Updated : 8 Sept 2020, 09:06 AM

আছমা বিবি জাতীয় মহিলা সংস্থা জয়পুরহাটের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। তার শাস্তি চেয়ে গত শনিবার ডিসি অফিসে আবেদন করেছেন জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম আলী।

তিনি বলেন, “কোনো দিন বিদ্যালয়ে না গেলেও ১৯৬৩ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন বলে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসা থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি (আছমা বিবি)। সেটা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চেয়ে করা আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন আছমা বিবি।”

বীরাঙ্গনা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে আছমার আবেদনে সুপারিশ করেছেন সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, “আমি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। সবকিছু পর্যালোচনা করতে পারিনি। কেবল আছমার কাগজপত্র দেখে স্বাক্ষর করেছিলাম।”

আছমার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর দেখানো হলেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চেয়ে করা আবেদনে ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। জন্ম সনদও জাল করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, “আছমা বিবির জন্ম সনদে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি দেখতে পেয়েছি।”

আছমা বিবি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে ওই আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর ২ জানুয়ারি কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর চিঠি পাঠান। এরপর তার তথ্য যাচাই করতে সদর উপজেলায় কর্মরত পাঁচ নারী কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

কমিটির আহ্বায়ক সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহনাজ সিগমা গত ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেন, যেখানে তিনি আছমা বিবিকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনাজ সিগমা বলেন, “তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে আমিও ছিলাম। আছমার জন্ম সনদ, ভোটার আইডি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধার সুপারিশ দেখে তদন্ত দলের অন্যরা স্বাক্ষর করার পর আমি স্বাক্ষর করেছি। পুনরায় তদন্তের নির্দেশ পেলে বিস্তারিত জেনে তারপর যা সঠিক তাই করা হবে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে আছমা বিবি বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্রে আমার জন্মতারিখ ভুল লেখা হয়েছে। তাই সংশোধন করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমি একজন প্রকৃত বীরাঙ্গনা হিসেবে যাবতীয় কাগজপত্রসহ মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন করেছি।”

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাটের ডিসি শরীফুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু বলেন, “আছমা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি সরকারের সঙ্গে এবং দলের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাচ্ছেন। তার বিচার হওয়ার দরকার এবং এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের চিহিৃত করা দরকার।”