বেনাপোলে খোলা আকাশের নিচে পণ্যজট

পণ্যগারে জায়গায় অভাব এবং খালাসে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেনাপোল বন্দরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকছে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য।

বেনাপোল  প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 05:09 AM
Updated : 8 Sept 2020, 05:21 AM

এতে রোদ-বৃষ্টিতে আমদানি পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, বন্দরের পণ্য উঠানামার কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো থাকায় বন্দর থেকে সময়মত পণ্য খালাস নিতে পারছেন না।

এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে যে কোনো সময় সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, “বেনাপোল বন্দরে এখন ২৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট আছে একটি এবং পাঁচ টনের ফর্কলিফট আছে পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি দীর্ঘদিন ধরে অচল। আর ২৫ টনের ফর্কলিফটি অকেজো থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটছে মালামাল উঠা নামায়।

তিনি বলেন, ৪০ টন, ৩৫ টন ও ১৯ টনের ক্রেন আছে একটি করে; আর ১০ টনের ক্রেন আছে দুটি। এসব ক্রেনের মধ্যে পাঁচটি অধিকাংশ সময় অকেজো থাকে।

সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “এখন বন্দরের গুদামে জায়গার অভাবে ওখান থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকানো হচ্ছে। খালাস না হওয়ায় পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন বা ফর্কলিফট মিলছে না। ফলে জায়গা ও ক্রেন সঙ্কটে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।”

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, “বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাড়া দিচ্ছে না। বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।”

বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, বন্দরের চালক ও ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশে কিছু ‘অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী’ এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ অচল করে রাখেন। মাঝে মধ্যে মেরামতের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ কেনা হয় তা অধিকাংশই পুরনো। ফলে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আবার তা অচল হয়ে পড়ে।

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, এই বন্দর দিয়ে দেশের সিংহভাগ শিল্প কলকারখানা, পোশাক কারখানা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মেশিনারিজ আমদানি করা হয়। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য লোড-আনলোড করা সম্ভব না। ৫১ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ওঠা-নামা করা হয়।

বন্দরের জায়গা ও ক্রেন সমস্যার সমাধান না করতে পারলে বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে; এতে পণ্য ধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। তাছাড়া ২৫ একর জায়গা আমরা অধিগ্রহণ করেছি। আরও সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

“দ্রুত ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোলে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। করোনার কারনে কাজ একটু পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন হলে এই বন্দরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।“