ওসি প্রদীপের ‍বিরুদ্ধে আরো দুইটি হত্যার অভিযোগ

কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুইটি অভিযোগ করা হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 02:51 PM
Updated : 7 Sept 2020, 02:51 PM

সোমবার দুপুরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে এ দুই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

দুই মামলায় আসামিদের মধ্যে ২৯ জন পুলিশ সদস্য এবং অন্য দুইজন টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। এ নিয়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যার অভিযোগ দায়ের হল।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) আদালতে নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে আলোচিত প্রদীপের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে।

সোমবার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ার নুর আহম্মদ নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী লাইলা বেগম বাদী হয়ে একটি এবং একই ইউনিয়নের ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আজিজ নিহতের ঘটনায় মা হালিমা খাতুন বাদী হয়ে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাদী লাইলা বেগমের আইনজীবী মোস্তাক আহম চৌধুরী বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মামলার নথিপত্রসহ ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী লাইলা বেগম বলেন, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সকালে স্থানীয় মোহাম্মদ কালু নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে নুর আহমদ টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে এক দল পুলিশ তাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। পরে খবর শুনে স্বজনরা থানায় যোগাযোগ করলে নুর আহমদ ছেড়ে দিতে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

“দাবিকৃত টাকা না দিলে নুর আহমদকে খুন করবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে বাড়িতে রক্ষিত স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা ওসি প্রদীপের হাতে দেওয়া হয়। এরপরও বাকি টাকা না দেওয়ায় নুর আহমদকে থানায় আটকে রাখে।”

বাদী বলেন, “পরদিন ২১ মার্চ রাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া এলাকায় নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে পুলিশ গুলি করে নুর আহমদকে হত্যা।”

এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগের আসামিরা হলেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এএসআই সঞ্জিব দত্ত, পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম খান, এসআই স্বপন চন্দ্র দাস, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এএসআই হিল্লোল বড়ুয়া, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল নাজমুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. আল-আমিন, কনস্টেবল সাব্বির হোসেন, কনস্টেবল সৈকত, কনস্টেবল মো. হোসেন, কনস্টেবল মো. হালিম মিয়া এবং কনস্টেবল এরশাদুল ইসলাম।

অন্যদিকে মোহাম্মদ আজিজ নামের আরেকজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় তার মা হালিমা খাতুন বাদী হয়ে জ্যেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে ওসি প্রদীপসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় দুই বাসিন্দার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ মামলায় বাদীর আইনজীবী নুরুল হোসাইন নাহিদ বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মামলার নথিপত্রসহ প্রতিবেদন আগামী ১২ দিনের মধ্যে আদালতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।

বাদী হালিমা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর সকালে তার ছেলে দিনমজুর মোহাম্মদ আজিজসহ স্থানীয় বাসিন্দা নুর হাছান ও আবদুল খায়েরকে এক দল পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ আজিজকে ছেড়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

“পরিবারের লোকজন ধার-কর্য করে পলিশকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা না দিলে মোহাম্মদ আজিজকে হত্যা করবে হুমকি দেওয়া হয়। ”

পরদিন ১৯ মার্চ রাত পৌনে ১২টায় মোহাম্মদ আজিজকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়া পাড়ার নৌকাঘাটে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করে বলেন হালিমা খাতুন।

এ ঘটনায় আদালতে দায়ের করা অভিযোগে ১৬ জন আসামিদের মধ্যে টেকনাফ পৌরসভার ডেইলপাড়ার মৃত আমির হোসেনের ছেলে নুরুল হোসাইন এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোদারবিল এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আবদুছ ছোবহান ছাড়া অন্য ১৪ জন পুলিশ সদস্য।

তারা হলেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এএসআই সঞ্জিব দত্ত, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই রামধন চন্দ্র দাশ, এসআই কামরুজ্জামান, এসআই রাসেল আহমদ, এএসআই মিঠুন কুমার ভৌমিক, কনস্টেবল রাজু মজুমদার, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল মংচি প্রু চাক, কনস্টেবল এসআই জামশেদ এবং কনস্টেবল রুমন দাশ।