চাঁদপুরে প্রথম আলো সম্পাদকসহ ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘মানহানি’ করার অভিযোগে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ পত্রিকাটির চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের আদালতে মামলা হয়েছে।

চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2020, 12:04 PM
Updated : 6 Sept 2020, 12:46 PM

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে রোববার দণ্ডবিধির ৫০০/৫০১/৫০২ ও ৩৪ ধারায় এ মামলা করেন।

চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. কামাল হোসাইন মামলাটি আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হেলাল।

মামলার অন্য তিন বিবাদী হলেন- প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ ও গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা।

গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গত ৩০ জুলাই ও ৪ সেপ্টম্বর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো, যার একটির শিরোনাম ছিল ‘একটি অনুমোদনহীন হাসপাতাল’ এবং অন্যটির শিরোনাম ‘অন্যের ঋণের টাকায় কেনা মহীউদ্দীনের হাসপাতাল’।

প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়, “সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চলছে অবৈধভাবে। গাজীপুরে অবস্থিত ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালের কোনো অনুমোদনই নেই। প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছরেও সেখানে চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগ তৈরি করা হয়নি।”

আর দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, “ফারমার্স ব্যাংক (এখন নাম বদল করে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সেই ঋণের একটি অংশ দিয়ে কেনা হয়েছে গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সে সময়ে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বর্তমান সাংসদ মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সিটি মেডিকেলেরও মালিক তিনি।

“গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত ওই হাসপাতাল কেনা হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকায়। অথচ ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে প্রকাশ্যে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের তিন ঋণ গ্রাহকের হিসাব থেকে গেছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংকের গুলশান শাখার এই তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এটলাস গ্রিনপ্যাক লিমিটেড, ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন ট্রলার এবং আয়েশা এন্টারপ্রাইজ। তাদের কাছে সুদ ও আসল মিলিয়ে ফারমার্স বা পদ্মা ব্যাংকের পাওনা ১১৫ কোটি টাকার ওপরে, যা আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। একই প্রক্রিয়ায় ঋণের টাকার একটি অংশ দিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ট্রলার ও কার্গো জাহাজ কেনা হয়েছে। এরও মালিক মহীউদ্দীন খান আলমগীর।”

ওই দুটি প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, ভুয়া, কাল্পনিক, অবাস্তব ও তথ্যবিহীন মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করার অভিযোগ করা হয়েছে হেলাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলায়।

এজাহারে বলা হয়েছে, “সিটি মেডিকেল কলেজে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কোনো শেয়ার নেই। এমনকি তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন সময়ে অবৈতনিক পরার্মশ দেন।”

বিবাদীরা ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ খবর প্রকাশ করায় মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘মান-সম্মান ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে’ দাবি করে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূর্ণ চাওয়া হয়েছে ওই মামলায়।

আইনজীবী হেলাল বলেন, “আমি সংক্ষুব্ধ হয়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অনুমতি নিয়ে তার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছি। বিচারক মো. কামাল হোসাইন মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আশা করি সঠিক তদন্তে আসল ঘটনা উন্মোচিত এবং সঠিক বিচার হবে।”