কুড়িগ্রামে আবাদি জমিতে বন্যার বালু, হাজারো কৃষকের চাষাবাদ বন্ধ

বানের পানি নামলে অন্য বছরের মতো আমন আবাদের স্বপ্ন ছিল কৃষক দেলোয়ার হোসেনের। তবে পানি নামার পর দেখা যায় তার তিন বিঘা জমির পুরাটাই বালুতে ঢেকে অনাবাদি হয়ে গেছে। তাই পরিবারের খাবার জোগাতে বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যেতে হয়েছে তাকে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2020, 11:30 AM
Updated : 6 Sept 2020, 11:39 AM

সরকারি তথ্য বলছে, বন্যায় এক লাখ ৩৫ হাজার কৃষকের ১৪০ কোটি টাকা মূল্যের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর কৃষকদের জন্য কিছু সরকারি প্রণোদনা এলেও বালুতে ঢাকা পড়া কৃষকদের জন্য এখন কোনো বরাদ্দ আসেনি।

তাই আসন্ন খাদ্যসংকটের আশঙ্কায় কুড়িগ্রাম সদরের চর সারডোবের দেলোয়ার হোসেনের মতো অনেক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

সারডোব গ্রামের কৃষক দুখু মিয়া বলেন, “হামার টাকা পইসা নাই। বালা সরাই কেমন করি?

“সরকার সাহায্য করলে হামরা মিষ্টি কুমড়া আর ভুট্টা আবাদ করলোং হয়।”

ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি রাবেয়া বেগম জানান, বালুজমিতে ফসল ফলাতে প্রচুর সেচের পানি দরকার হয়। বর্তমান অবস্থায় তাদের পক্ষে সেচের অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়।

এই গ্রামের কনছার আলী জানান, নদী ভাঙনের তাণ্ডবে ঘর বাড়ি হারিয়েছে তার গ্রামের অনেকেই। তার উপর বন্যায় পাট নষ্ট এবং জমিতে বালুর কারণে আমন রোপন করতে না পারায় এ এলাকার ঘরে ঘরে এখন হাহাকার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এ বছর বন্যায় পানির ঢল, ভাঙন ও বাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রামে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে। গত কয়েক বছরে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফসল ফলিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা অভাব মোচন করলেও এ বছর আমন চাষ করতে না পেরে খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান গেছে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে টাকার অংকে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।

বন্যা পরিবর্তী সময়ে এক হাজার ২শ’ কৃষককে এক বিঘা করে জমি মাসকালাই চাষ করার জন্য বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রায় সাত হাজার কৃষককে আমনের চারা এবং ১০ হাজার কৃষককে শাক সবজির বীজ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে বালু জমিতে চাষযোগ্য ফসল আবাদের জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি।”

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামে মধ্য জুলাইয়ে একটি বিকল্প বাঁধ ভাঙার কারণে শত শত একর আবাদি জমিতে ৩-৫ ফুট বালুতে ঢেকে গেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী জয়কুমর ও হলোখানা গ্রামেরও। এসব এলাকার কৃষকরা এবার আমন চাষ করতে না পারছেন না। পাশাপাশি বালুতে ঢেকে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে পাট, কলা, সবজি ও ভুট্রাসহ বিভিন্ন ফসল।

হলোখানা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, “গত বছর যে জমিগুলোতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছিল, এবার সবগুলো জমি বালুতে ঢাকা পড়েছে।”

তার ১০ বিঘা জমি বালুতে ঢাকা পড়েছে, এসব জমিতে কয়েক বছর ফসল ফলানো যাবে কি-না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি। একই অবস্থা বাঙ্গর আলী, কলিম উদ্দিনসহ অনেক কৃষকের।

বালুর কারণে আবাদ না হওয়ায় কৃষক এবং দিনমজুর পরিবারগুলোতে আসন্ন খাদ্য সংকটের দুশ্চিন্তা ভর করেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা চান বালু জমিতে চাষের উপযোগী মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু ও ভুট্রার মতো ফসল চাষ করতে। এক্ষেত্রে রয়েছে পুঁজির সংকট। তাই তারা এ সংকট মেটাতে তারা চান সরকারি সহায়তা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কৃষি কমকর্তা  জাকির হোসেন জানান, বন্যায় জমি অনাবাদি ও ফসল নষ্টের বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষি প্রণোদনার কোনো বরাদ্দের খবর এখনও তার কাছে নাই।