পটুয়াখালীর টাউন হলে ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছিত

পটুয়াখালী শহরের প্রাণ কেন্দ্রে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন টাউন হল প্রাঙ্গণে স্টল নির্মাণের ছবি তুলতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে স্থানীয় দুই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2020, 05:41 PM
Updated : 4 Sept 2020, 05:41 PM

সাংবাদিকরা হলেন, চিন্ময় কর্মকার এবং কেএম শাহাদাত হোসেন।

শুক্রবার সকালের এ ঘটনায় ওই দুই সাংবাদিক রাতে সদর থানায় দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি করেছেন বলে ওসি আখতার মোরশেদ জানিয়েছেন।

অভিযোগে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী রুহুল আমীন আকরাম শিকদার ও লিকন গাজীর নাম উল্লেখ করেছেন।

ওসি জানান, আদালতের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুক্রবার সকালে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে ধ্রুবতারা নামের স্থানীয় এক সংগঠনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়। এমন সময় ওই দুই সাংবাদিক সেখান থেকে কয়েকশ গজ দূরে পুরাতন টাউন হল এলাকায় নির্মাণের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন।

পটুয়াখালী শহরে পুরাতন টাউন হল প্রাঙ্গণে স্টল নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন

চিন্ময় কর্মকার এবং কেএম শাহাদাত হোসেন জানান, পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী পুরাতন টাউন হলের সামনে স্টল নির্মাণ করা হচ্ছে খবর পেয়ে ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী রুহুল আমীন আকরাম শিকদার ও লিকন গাজীসহ ব্যবসায়ীরা তাদের পেশাগত কাজে বাধা দেন।

“তারা আমাদের পরিহিত মাস্ক খুলে উল্টো আমাদেরই ছবি তুলে নেয়,” বলেন চিন্ময়।

সাংবাদিক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা হয়েছে। সেখানে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় বলে জানিয়েছেন ক্লাবের কর্মকর্তারা।

প্রায় ১৩০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন মহাকুমা শহরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য পুরাতন আদালত ভবন সংলগ্ন এলাকায় ২৫০ আসন বিশিষ্ট এ হল নির্মাণ করে বলে সাংস্কৃতিক কর্মী ও টাউন হল ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্টরা জানান।

পটুয়াখালী শহরে পুরাতন টাউন হল প্রাঙ্গণ

তারা বলেন, কালের বির্বতনে এ পুরাতন টাউন হল হয়ে ওঠে শহরের সাংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র। এ হলে রাজনৈতিক সভা করেছেন জাতীয় অনেক নেতারা।

স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে এ টাউন হল পরিচালনা করা হতো। পদাধীকার বলে ডিসি এ কমিটির সভাপতি বলেও জানান তারা।

সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানান, একশ বছরের বেশি সময় এই নিয়মেই টাউন হল পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয় টাউন হলের জমিটির মালিক বিচার বিভাগ।

সাংস্কৃতিক সংগঠন সুন্দরম সভাপতি ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম নুরুল ইসলাম জানান, জমির মালিকানা যে বিভাগেরই থাকুক না কেন তাতে পটুয়াখালীবাসীর লাভ-ক্ষতি নেই। মূল কথা হল এটির মালিক সরকার।

“পুরাতন টাউন হলটি যাতে সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সব মানুষ ব্যবহার করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”

পটুয়াখালী শহরে পুরাতন টাউন হল প্রাঙ্গণ

পটুয়াখালী ডিসি ও টাউন হল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জমির বিষয়টা এখনই বলতে পারছি না, রেকর্ডপত্রেই সেটা পাওয়া যাবে।

তবে স্টল নির্মাণের বিষয়ে তিনি স্থানীয় নাগরিকদের কাছ থেকে একটি দরখাস্ত হাতে পেয়েছেন এবং অন্য সূত্র থেকেও শুনেছেন বলেন ডিসি।

যারা স্টল নির্মাণ করছেন তাদের জমি কি না সেটা খতিয়ে দেখার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে জেলা বিচার বিভাগের কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।