প্রদীপের বিরুদ্ধে হত্যার আরও দুই অভিযোগ

কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি অভিযোগ হয়েছে আদালতে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 07:45 PM
Updated : 2 Sept 2020, 07:45 PM

বুধবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে এই দুই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ৪৭ জন পুলিশ সদস্য এবং বাকি ছয় জন টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) আদালতে নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে একর পর এক হত্যার অভিযোগ দায়ের হতে থাকে।

এ নিয়ে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাসহ কক্সবাজারে আটটি হত্যার অভিযোগ দায়ের হলো।

এছাড়া চট্টগ্রামেও দুই ভাইকে ধরে নিয়ে আট ‘লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে না পেয়ে’ টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে প্রদীপসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গাঘোনার মুছা আকবর নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী শাহেনা আকতার বাদী হয়ে একটি এবং হ্নীলা ইউনিয়নের মধ্যহ্নীলা কাঞ্জরপাড়ার সাহাব উদ্দিন নিহতের ঘটনায় ভাই হাফেজ আহমদ বাদী হয়ে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাদী শাহেনা আকতারের আইনজীবী মোহাম্মদ রিদুয়ান আলী বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলার নথিপত্র আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে পাঠানোর নিদের্শ দিয়েছে আদালত।

শাহেনা আকতারের অভিযোগ, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মুছা আকবরের বড় ভাই আলী আকবরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুলিশ। একই দিন বাদীর বৃদ্ধ শ্বশুর আবুল বশর ও ভাবি আরিফা বেগমকে বিনা মামলায় আটক করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে একটি ভূয়া মামলায় এই দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

“এই ঘটনায় ৫ মার্চ কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মুছা আকবর। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৮ মার্চ দুপুরে মুছা আকবরকে ধরে নিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হলেও রাতে বন্দুকযুদ্ধের নামে মুছাকে হত্যা করা হয়।”

এই অভিযোগে আসামিদের ২২ জন পুলিশ সদস্য।

এরা হলেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক (অপারেশন) রকিবুল ইসলাম খান, এসআই রাসেল আহমদ, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই মো, নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এসআই মো. জামাল উল্লাহ, এএসআই মাইনুদ্দিন, এএসআই নইমুল হক, এএসআই মিশকাত উদ্দিন, এএসআই রামধন চন্দ্র দাশ, এএসআই সঞ্জীব দত্ত, এএসআই মিটন কুমার ভৌমিক, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, কনস্টেবল হেলাল উদ্দিন, কনস্টেবল দীন ইসলাম, কনস্টেবল মো. বোরহান, কনস্টেবল শাহেদুল, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও এপিবিএনের সদস্য এডিসন চাকমা।

অন্য আসামিরা হলেন টেকনাফের উলুবনিয়ার হারুন-অর রশিদ সিকদার, বালুখালীর সোয়েব আজাদ, বেলাল চৌকিদার, সুলতান আহমদ চৌকিদার ও বেলাল।

অন্যদিকে সাহাব উদ্দিন নামের আরেকজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় ভাই হাফেজ আহমদ বাদী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে ওসি প্রদীপসহ ২৫ জন পুলিশ সদস্য এবং টেকনাফের স্থানীয় এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

এই মামলার বাদীর আইনজীবী শাহ আলম বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলার নথিপত্র আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে পাঠানোর নিদের্শ দিয়েছেন।

হাফেজ আহমদের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল টেকনাফ থানার এসআই দীপক বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাহাব উদ্দীনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ক্রসফায়ার না দেওয়ার কথা বলে তার পরিবার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

“পুলিশের দাবি মতো পরিবারের স্বজনরা ৫০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু আরও ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী কাঞ্জরপাড়ার ধানক্ষেতে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে সাহাব উদ্দীনকে গুলি হত্যা করা হয়।”

এ ঘটনায় দায়ের অভিযোগে ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়ার মাওলানা সিরাজুল হকের ছেলে আমানুল হককে।

আসামিদের মধ্যে ২৫ জন পুলিশ সদস্য।

এরা হলেন টেকনাফ থানার এসআই দীপক বিশ্বাস, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই মশিউর রহমান, পরিদর্শক (অপারেশন) রকিবুল ইসলাম খান, এসআই রাসেল আহমদ, এসআই বোরহান উদ্দিন ভভূঁইয়া, এসআইমোহাম্মদ বাবুল, এসআই সাব্বির আহমদ, এএসআই সুব্রত রায়, এএসআইজয়নাল আবেদীন, এএসআইদিদার হোসেন, এএসআইমিসকাত উদ্দিন, এএসআই ফরহাদ হোসেন, এএসআই ফখরুজ্জামান, এএসআই মাঈন উদ্দিন, এএসআই সঞ্জিব দত্ত, এএসআই অহিদ উল্লাহ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল মো. সালমান, কনস্টেবল মো. খোকন, কনস্টেবল মো. রাশেদুল, কনস্টেবল মো. আতিকুল, কনস্টেবল সৈকত বড়ুয়া, কনস্টেবল নাজমুল ইসলাম।