গাজীপুরে ব্যংকে গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ, বরখাস্ত ৩

গাজীপুরে অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায় গ্রাহকের একাউন্ট থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ওই শাখার ব্যবস্থাপককে বদলি করা হয়েছে।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 06:44 PM
Updated : 2 Sept 2020, 06:44 PM

ব্যাংকটি শ্রীপুর শাখায় এই ঘটনা ঘটে বলে বুধবার অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গাজীপুর জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শামীম আরা সুলতানা গণি জানান।

বরখাস্ত হয়েছেন শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার মো. দোলোয়ার হোসেন।

শামীম আরা সুলতানা গণি বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকটির শ্রীপুর শাখায় গ্রাহকেদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত রাখা টাকার গড়মিল নজরে এলে ১৩ জুলাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান। ওইদিনই অডিট টিম গঠন করে তদন্ত শুরু করেন তারা।

“প্রাথমিকভাবে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলে ১৬ জুলাই মো. নজরুল ইসলাম, বদরুল হাসান সনি ও মো. দোলোয়ার হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে ঘটনার ব্যাখ্যা তলবসহ ঢাকা পশ্চিম শাখায় বদলি করা হয়।”

ওই শাখার গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হিসাবের অর্থ ঠিক করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গ্রাহক এবং এই প্রতিষ্ঠানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য সকল পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা গ্রাহকের টাকা রিফান্ড করার চেষ্টা করছি।”

ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার গ্রাহক জুয়েনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্বামী ও ছেলে সৌদি আরব থাকেন। সেখান থেকে তার একাউন্টে তারা টাকা পাঠান। ১৩ জুলাই তিনি ওই একাউন্টের তথ্য জানতে গিয়ে দেখেন তার একাউন্টে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা কম।

পরে বিষয়টি ব্যবস্থাপককে জানালে ১৪ জুলাই পাঁচ লাখ এবং ১৫ জুলাই তিন লাখ ২০ হাজার টাকা তার একাউন্টে জমা করা হয় বলে তিনি জানান।

আরেক গ্রাহক আফতাব উদ্দিন বলেন, গত ৪ জুন তিন লাখ টাকা তার হিসাবে জমা করেন। ২২ অগাস্ট ম্যানেজার জমা ও চেক বইসহ কাগজপত্র নিয়ে তাকে ফোনে ব্যাংকে যেতে বলেন। পরদিন ব্যাংকে গেলে ম্যানেজার জানান তার একাউন্টে তিন লাখ টাকা কম আছে। পরে অভিযোগ করার পর ২৩ জুলাই ওই টাকা তার একাউন্টে জমা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে ওই ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্ত প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ক্যাশ অফিসার বদরুল ইসলাম সনি গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল করে চেক বই উত্তোলন করেছেন। পরে চেকে নিজেই গ্রাহকের স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। ওইসব চেক এন্ট্রি করার সময় চেকের নম্বর এন্ট্রি না করেই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন সনি।

নজরুল আরও বলেন, অনেক সময় গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে গেলে তা ওই একাউন্টে জমা না করেও তা আত্মসাৎ করেছেন সনি।

“অর্থাৎ সনি গ্রাহকের টাকা ডেবিট করেও আত্মসাৎ করেছেন আবার ক্রেডিট করেও আত্মসাৎ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, !সনি নিজের কম্পিউটারের আইডি লক হওয়ার কথা বলে আমার কম্পিউটার ব্যবহার করে অথবা কৌশল করে আমার আইডি ও কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজেই অথরাইজ করে গ্রাহকের টাকা নিয়ে গেছেন।

“একইভাবে সনি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার দেলেয়ার হোসেনের আইডি ব্যবহার করেও টাকা অথরাইজ করে নিয়ে গেছেন। কাগজে কলমে অথরাইজ করার কাজটিতে দেলোয়ার ও আমার নাম চলে আসায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেলোয়ার হোসেন ও আমি সাময়িক বরখাস্ত হই।”

বদরুল হাসান সনি নজরুল ইসলামের আইডি ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করে বলেন, “ব্যাংকের টাকা আমার একার পক্ষে তুলে নেওয়া সম্ভব নয়। টাকা তুলে নিতে চারজনের স্বাক্ষর তথা ভেরিফিকেশন লাগবে। নজরুল ইসলাম আমার সিডি ইনচার্জ। তিনিও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।”

সনি গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “শুধু নিজেকে সেভ করার জন্য নিজের জমি বিক্রি করে, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে ব্যাংকের ওইসব টাকা শোধ করছি।”

গ্রাহকের চেক বই উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে সনি বলেন, তিনি নিজের চেক বই উত্তোলন করেছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের (সদর দপ্তর) মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সালাম মোল্লা বলেন, এ যাবৎ আত্মসাৎকৃত বিভিন্ন গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকার উপরে পুনরুদ্ধার করে তা গ্রাহকের হিসাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অডিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কতজন গ্রাহকের কী পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। অডিটের পর দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।