বুধবার বিকালে কক্সবাজার কারাফটকে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রণালয় কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছে এই কমিটি।
মিজানুর রহমান বলেন, সকাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্যরা কথা বলেছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সাক্ষী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গে কাছ থেকে যে তথ্যাদি পাওয়া গেছে সেগুলোতে প্রদীপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে বিষয়াদি ছিল সেগুলো নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
“এখন যে কথাগুলো তিনি (প্রদীপ) বলেছেন, সেগুলো এখন আমাদের তথ্য ও অন্যান্য তথ্যগুলোর সাথে বিশ্লেষণ করে রিপোর্টটি ফাইনাল করে ফেলব।”
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “এইবারের মেয়াদে যে সময়টি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে; আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্টটি জমা দিয়ে দেব।”
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে পৌঁছান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এরপরই টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
ওসি প্রদীপকে চার দফায় ১৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার বিকালে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে সময় বাড়ানোর পরও রিমান্ডে থাকা সিনহা হত্যা মামলার আসামী টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি এই তদন্ত কমিটি।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) আদালতে নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামী করা হয়।
মামলা করার পরদিন (৬ অগাস্ট) ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ওসি প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এই মামলার তিন আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে গত ১৮ অগাস্ট প্রথম দফায় সাত দিন, ২৪ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় চার দিন, ২৮ অগাস্ট তৃতীয় দফায় তিন দিন এবং সর্বশেষ সোমবার চতুর্থ দফায় শুধু প্রদীপকে এক দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।
এছাড়া এই ঘটনা তদন্ত করতে গত ১ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরদিন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) একজন প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি।
তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও ১০ অগাস্ট তদন্ত কমিটির সময় বাড়ানোর আবেদন করে। তখন ২৩ অগাস্ট পর্যন্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছিল।
এই কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটি ইতিমধ্যে গণশুনানিও করেছে।