ফেনীতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু: সব তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের থাকে না 

ফেনীতে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া অনেক রোগীর হিসাব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে না থাকার তথ্য মিলেছে।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2020, 08:21 PM
Updated : 31 August 2020, 08:21 PM

এমন কয়েকটি ঘটনা পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ঘটেছে বলে মারা যাওয়া ব্যক্তির স্বজন ও স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল খালেক মামুন বলেন, পরশুরাম উপজেলার সম্প্রতি দুই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলেও পরিবার থেকে জানানো হয়নি।

“মঙ্গলবার (২৫ অগাস্ট) বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রোগীদের নিয়মিত খবর নিতে গিয়ে জেনেছেন তারা ইতোপূর্বে মারা গেছেন।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ফরিদা আক্তার (৫৫) গত ১৩ অগাস্ট ও আবদুর রব (৬০) গত ১২ অগাস্ট মারা যান বলে মামুন জানান।

ডা. মামুন আরও বলেন, উপজেলা উত্তর গুথুমা এলাকার চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা ফরিদা আক্তার অসুস্থ হলে গত ১০ অগাস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা দেন। পরদিন নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেলেন। ১৩ অগাস্ট তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।

তিনি আরও জানান, উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা ও খন্ডল হাই এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রব গত ৮ অগাস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা দেন। এর দুদিন পর গত ১০ অগাস্ট নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

“চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেলেন। ১২ অগাস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।”

পরশুরামের মতো ছাগলনাইয়াতেও এমন মৃত্যুর খবর পেয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত ১৮ অগাস্ট সুস্থতার খবর জানতে চেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এক রোগীকে ফোন দিলে জানতে পারে রোগী ১০ দিন আগে মারা গেছেন।

ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শিমুল বড়ুয়া জানান, গত ১৮ অগাস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী আবদুল করিমের (৫৪) অবস্থার খোঁজখবর নিতে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পরের দিন মারা যান বলে স্বজনরা চিকিৎসককে জানান।

“ওই রোগী গত ৮ অগাস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।”

আবদুল করিমের মেয়ে মোমেনা ছিদ্দিকা জান্নাত বলেন, আবুধাবী প্রবাসী তার বাবা ‘লকডাউনের’ কিছুদিন আগে দেশে আসেন। তার জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ৫ অগাস্ট ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। ওইদিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

“এ সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওইদিনই তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। দুদিন পর ৭ অগাস্ট নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়।”

পজিটিভ হওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনা পজেটিভ হওয়ার রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফেনী থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ৮ অগাস্ট সকালে তিনি মারা যান।”

ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন বলেন, সাধারণত কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার ৮-১০ দিন পর রোগীর খোঁজখবর জানতে ফোন দেওয়া হয়। সে হিসেবে ওই ব্যক্তিকে ফোন করা হয়েছিল।

“এছাড়া অনেক রোগীর ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয় না। এই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।”

জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত জানান, গত বুধবার (২৬ অগাস্ট) পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৪৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৪৯ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেনসহ ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। মৃতদের মধ্যে ১২ জন সোনাগাজীর, ১০ জন ফেনী সদরের, সাত জন দাগনভূঞার, চার জন ছাগলনাইয়ার ও চার জন পরশুরাম উপজেলার বাসিন্দা।